আফজাল হোসেন
গ্রামে জন্মে বড় হওয়া মানুষদের মনে থাকার কথা, তখন কোনো মনে প্রেম প্রেম ভাব জেগে উঠলে, তা প্রকাশ করতে চাওয়া সহজ ছিলো না। দেয়ালে, গাছের গায়ে, বড় আকারের গাছের পাতা- এসব স্থানে আবেগ প্রকাশ করে মন হাল্কা করা হতো।
সতেরো আঠারোতে পা দিলে যেসব মনে প্রেম প্রেম ভাব জেগেছে, সে প্রেম যার জন্য, তাকে বলার সাহস অধিকাংশের ছিলো না। প্রেম হওয়া অতি কঠিন কাজ ছিল কিন্তু যখন যার সাথে ইচ্ছা, মনে মনে প্রেমে পড়া যেতো। সে প্রেম দূর থেকে দেখার। নিকটে গেলে চোখ চলে যেতো মাটিতে, ধুলায়।
এই প্রকাশ করতে না পারা প্রেমের ভয়াবহ একটা চাপ তো ছিলোই, সে চাপের যে হাঁসফাঁস অনুভব- তা থেকে হাল্কাবোধ করার সহজ উপায় ছিলো কোথাও কিছু লেখা। সে উপায় কে কবে আবিষ্কার করেছিল কে জানে!
প্রেমিক মন নির্জন কোনো গাছের গায়ে ছুরি দিয়ে কেটে নিজের নাম লিখে আঁকতো একটা যোগ চিহ্ন, সেই বড় করে আঁকা যোগচিহ্নের পাশে প্রেমে পড়া কিশোর তার কল্পিত কিশোরী প্রেমিকার নামটা লিখে ভেবেছে, আমার প্রেম সার্থক হলো আজ।
এমন লেখা পুরানো দেয়ালে ইটের টুকরো বা কয়লা দিয়েও লেখা হয়েছে। খুবই গোপনে লিখতে হতো এই প্রেমময় আকাঙ্খার কথা। কারণ প্রেমে পড়া, সে প্রেমের কথা গাছে, দেয়ালে লিখে রাখা ভদ্রজনের কাজ নয় বলে বিবেচনা করা হতো।
আর একদল মানুষও ছিলো, যাদেরকে সভ্যসমাজ সুস্থ, স্বাভাবিক, ভদ্রজন বলে ভাবে নি। তাদের কান্ডকীর্তি মোটেও যে ভালো নয়, তা তারা নিজেরাই জানতো।
তারা প্রেম নিয়ে ভাবতে অক্ষম ছিলো। তাদের কাছে নির্জন স্থানের দেয়াল ছিলো মনের ভিতরে খলবল করা বিষয় প্রকাশের স্থান।
প্রেম প্রকাশ করতে চাওয়ারা আড়াল খোঁজেনি, চেয়েছে মানুষের চোখে পড়ুক। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলার সাহস না থাকুক প্রেমময় মনে বিকল্প এক প্রকার দুঃসাহস থাকে।
যা অপরাধ, তা প্রকাশ্যে করার সাহস মানুষের থাকে না। তাই দেয়ালে বা এখানে সেখানে কুৎসিত কথা লিখে, ছবি এঁকে যারা মনে সুখ অনুভব করেছে, তাদেরকে তখন তা করতে হয়েছে খুবই সাবধানে, গোপনে। এই সতর্কতা প্রমান করে, ভালো কাজ মন্দ কাজের তফাৎ তাদের জানা ছিলো। মন্দকে মন্দ চোখেই দেখে সমাজ, তাদের তা অজ্ঞাত ছিলো না।
সময় বদলেছে। একালের অনেক মানুষ অসীম সাহসী। কোনোরকম মন্দ কান্ডের জন্য গোপনীয়তা, সাবধানতা, সতর্কতার দরকার হয় না এখন। যা ইচ্ছা তাই লেখা, বলার জন্য এখন রয়েছে ডিজিটাল দেয়াল। যে দেয়ালে ঝুঁকে থাকে পুরো দেশ, দুনিয়া। চাইলে এখন অসভ্যতা করা যায় বুক ঠুকে।
দুনিয়া এমন বদলানো বদলেছে, অসভ্য কান্ডকীর্তি করতে পারা এখন আর লজ্জার নেই। অসভ্যতায় এখন নিন্দার বদলে মেলে প্রশংসা। সহজে মেলে বিরাট সংখ্যার অনুসারী।
লেখক: অভিনয় শিল্পী,নাট্যকার।