গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে দেখা গেছে ব্যাপক দরপতন। বাজারে কার্যত কোনো ইতিবাচক সাড়া না থাকায় বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম টানা নিম্নমুখী থেকেছে। সপ্তাহের শেষে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন এক সপ্তাহে কমে গেছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।
একই সঙ্গে সূচকগুলোয় বড় পতন ঘটেছে, এবং দৈনিক গড় লেনদেনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এবং নতুন তহবিলের অভাবেই বাজারে এই দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সপ্তাহে মোট ৫৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, যেখানে বিপরীতে ৩২৬টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, দাম কমার তালিকায় থাকা কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে দাম বাড়ার তালিকার প্রায় ৬ গুণ।
এমন ঢালাও দরপতনের ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ২৮৫ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষে এই অঙ্ক ছিল ৭ লাখ ১৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। ফলে এক সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ১৭ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা বা ২.৪৯ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে আগের সপ্তাহে মূলধন কমেছিল ৭ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বা ১.০৯ শতাংশ।
মূলধনের পাশাপাশি সূচকেও এসেছে বড় ধস। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৬৪.৩০ পয়েন্ট বা ৩.১১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটির পতন ছিল ১৩২.০৭ পয়েন্ট বা ২.৪৪ শতাংশ। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ৪৭.৯৮ পয়েন্ট বা ৪.২৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটির পতন ছিল ৩৭.৭১ পয়েন্ট বা ৩.২২ শতাংশ।
এছাড়া বাছাইকৃত ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও বড় পতনের মুখে পড়ে। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৬৫.১২ পয়েন্ট বা ৩.২০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটির পতন ছিল ৪৮.৮০ পয়েন্ট বা ২.৩৪ শতাংশ।
বাজারে দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনেও এসেছে ধীরগতি। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫২২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। ফলে গড়ে দৈনিক লেনদেন কমেছে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ২০.৫৩ শতাংশ।
লেনদেনের শীর্ষে ছিল ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৩.৮৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডে, প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেডে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার।
এছাড়া লেনদেনে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে সামিট এলায়েন্স পোর্ট, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা এখন চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। মূলধন হারানোর ভয়ে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে সরে যাচ্ছেন। নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না বাড়লে বাজারে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরবে না বলেও তারা মনে করছেন।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হার বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এবং কোম্পানিগুলোর দুর্বল আর্থিক ফলাফল বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ না এলে এই নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।