রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতকোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা। তাদের মতে, এ দুর্ঘটনায় দেশের রপ্তানি বাণিজ্য—বিশেষত তৈরি পোশাক খাত—গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোববার দুপুরে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক খানের নেতৃত্বে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মিজানুর রহমান, পরিচালক ফয়সাল সামাদ এবং বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে লিখিত বক্তব্যে ইনামুল হক বলেন, সাধারণত উচ্চমূল্যের পণ্য ও জরুরি শিপমেন্ট আকাশপথে পাঠানো হয়। অগ্নিকাণ্ডে এসব তৈরি পোশাক, মূল্যবান কাঁচামাল এবং নতুন অর্ডারের জন্য প্রয়োজনীয় স্যাম্পল পণ্য সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এই দুঃখজনক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি শুধু চলতি রপ্তানির ক্ষতি নয়, ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও অর্ডারও প্রভাবিত করবে।” বিজিএমইএ ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে। সদস্য কারখানাগুলোর কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের তালিকা চাওয়া হয়েছে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে।
ইনামুল হক জানান, প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি কারখানা আকাশপথে পণ্য পাঠায়। ফলে ক্ষতির পরিমাণ “বিপুল” হতে পারে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে শিগগিরই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা করবে বিজিএমইএ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, “ভেতরে প্রবেশ করে আমরা ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি—পুরো ইমপোর্ট সেকশন পুড়ে গেছে। আমাদের অনুমান, ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) টাকারও বেশি হতে পারে।”
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাণিজ্য উপদেষ্টা নতুন পণ্য আমদানি কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত টার্মিনাল–৩–এ বিকল্প স্থানে আমদানি পণ্য রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ৭২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য খালাস সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফয়সাল সামাদ আরও বলেন, “কাস্টমসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হচ্ছে, যাতে দ্রুত পণ্য খালাস করা যায়। প্রয়োজনে শুক্র-শনিবারও কাজ চলবে। ব্যবসার স্বার্থে এখন আর সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে না।”
বিজিএমইএর নেতারা শিল্প এলাকা, গুদাম ও কারখানাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে অগ্নি–নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।