চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিতের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরাম। সংগঠনটি এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন শুল্ক বাতিল না হলে বন্দর অচলের আল্টিমেটাম দিয়েছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ১৯শে অক্টোবর, রোববার থেকে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
এর আগে ৪ দিন ধরে আন্দোলনে রয়েছেন প্রাইম মুভার ও ট্রেলার মালিকরা। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পর্যায়ক্রমে আরও সংগঠন যুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে। ইউনূস সরকারের ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
শনিবার চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস এলাকায় নেভি কনভেনশন হলে এক প্রতিবাদ সভা থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছোট ভাই আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের ২ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী সভায় অংশ নেন এবং মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
সভায় বলা হয়, ব্যবসায়ীদের আপত্তি সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৪ই সেপ্টেম্বর একটি গেজেট প্রকাশ করে, যা ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়। এতে গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ বাড়তি মাশুল বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতেই করা হয়েছে।
আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক মাশুল নির্ধারণ করতে হবে। দাবি না মানা হলে বড় পরিসরে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে বন্দর অচল করে দেওয়া হবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ‘বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন, তারা আমাদের মানুষ মনে করেন না। এর ফল ভোগ করতে হবে তাদেরই।’
এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুস সালাম প্রশ্ন তোলেন কেন মোংলা ও পায়রা বন্দরে মাশুল বাড়ানো হয়নি, অথচ লাভবান চট্টগ্রাম বন্দরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘সরকার বিদেশে গিয়ে শুল্ক কমায়, দেশে এসে বাড়ায়। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম, কিন্তু তিনিও আমাদের হতাশ করেছেন।’
বিজিএমইএর পরিচালক এম. ডি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্কের চাপের মধ্যেই এখন বন্দরের নতুন মাশুল ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে সম্ভাব্য সুযোগগুলো হারিয়ে যাবে।’
সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, ‘১৩ হাজার কর্মচারী কাজ করছে এই খাতে। তারা এই বাড়তি বোঝা বহনে অক্ষম। ট্যারিফ না কমলে ব্যবসায়ীরা পথে বসবে।’
বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘৫৭ টাকার ফি এক লাফে ২৩০ টাকা করা হয়েছে। অথচ প্রতি ট্রিপে আমাদের আয় হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। চার গুণ মাশুল বাড়ানোর পেছনে কারা আছে, আমরা জানতে চাই।’
শনিবার অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন, পারভেজ আকতার (সাবেক চেয়ারম্যান, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন), মঈনুদ্দিন আহমেদ (টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স ও ডিলার অ্যাসোসিয়েশন), মোহাম্মদ ইয়াছিন (মোটর পার্টস আমদানি এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন), মোহাম্মদ শফি (ইনল্যান্ড জাহাজ মালিক সমিতি), মোহাম্মদ হোসেন (চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন), শারুদ নিজাম (বিপণিবিতান ব্যবসায়ী সমিতি), শহিদুল্লাহ চৌধুরী (বিজিএপিএ সভাপতি) প্রমুখ।
বক্তারা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে, তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।