নব্বই দশকের এমন কোনো বাংলাদেশি নেই, যে কিনা বাকের ভাইকে চেনে না । এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও জানে বাকের ভাইয়ের জনপ্রিয়তার গল্প । হ্যাঁ, বলছি আসাদুজ্জামান নুরের কথা । জন্মগতসূত্রে তিনি ভারতীয় নাগরিক । ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহন করলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশে বসবাসের কারণে তিনি একজন সম্মানিত বাংলাদেশি নাগরিক । লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অভিনয়ের মাধ্যমে । হুমায়ুন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক “কোথাও কেউ নেই” এর বাকের ভাই পৌঁছে গিয়েছিলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে । আমি উনাকে প্রথম দেখি ১৯৯১ বা ৯২ সালে । তখন আমি মাত্র কলেজে পড়ি । উনার স্ত্রী মিসেস শাহিন ওরফে খুকু আমাদের লোন অফিস পাড়ার নড়াইল পুকুর পাড়ে কোনো একসময় ভাড়া থাকতেন । ৯১ কি ৯২ তে কোনো এক শুটিং এর জন্য আসাদুজ্জামান নূর যশোরে গেলে উনার স্ত্রী সাথে যান । যে বাড়িতে উনারা ছোটবেলায় ছিলেন সেই বাড়িটি দেখতে যান এবং পাশের বাসার বান্ধবীর বাসায় যান । ওই বান্ধবীটি হচ্ছে আমার মেজ আপার ননদ। নিজ বাড়িতে উনাকে দেখে মেজ আপা আমাকে ফোন দেয় আর আমি উম্মাদের মতো দৌড়ে যাই। এত সুন্দর গোলাপি গায়ের রঙের কোনো পুরুষ হয় সেটা ওই প্রথম জেনেছিলাম । তার আগে জানতাম ছেলেরা বোধহয় শ্যামলাই হয় । ছোট বয়সের বোকা ভাবনা আর কি!! দ্বিতীয়বার উনাকে আমি দেখি বেইলি রোডে নক্ষত্রের রাতের সেটে । প্রিয় অভিনেতা, প্রিয় বাকের ভাই , এত কাছে দাঁড়িয়ে!! -কল্পনা মনে হয়েছিলো । একজন ভীষণ অমায়িক মানুষ । নিজের একমাত্র প্রকাশিত উপন্যাসটা হাতে দিয়েছিলাম । বেশ কিছুক্ষণ পর, নিচের বারান্দায় বসে আছি , শুটিং তখনও শুরু হয়নি , দোতলার রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে উনি জোরে হেঁকে বললেন, “এই মেয়ে শুনছো, তোমার লেখার হাত খুব ভালো । আমি একবারে ১৩ পৃষ্ঠা পড়ে ফেলেছি । ” আমি তখন এমন মানুষের কাছ থেকে এমন কমপ্লিমেন্ট পেয়ে হাওয়ায় ভাসছি । 🤣🤣। যাইহোক , তারপর কেটে গেছে অ-নে-ক বছর । তৃতীয় দেখা ২০২০ সালে বইমেলায় । বাকের ভাই থেকে উনি তখন হয়ে গেছেন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় । এসেছিলেন শুক্রবার সকালে সিসিমপুর উদবোধন করতে । মাঠজুড়ে ছিলো নানারকম গুঞ্জন । সেদিন অনেককে শুনেছি বাজে কথা বলতে, কটাক্ষ করতে । ভীষণ দুঃখ হয়েছিলো । প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে কেন সবাই খারাপ কথা বলছে ? বাড়ি এসে অনেক ভেবে এটা বুঝেছি, মন্ত্রী মানেই একদলীয় । সে যে দলেরই হোক না কেন অন্যদল তাকে পছন্দ করবে না । মন্ত্রী মানেই রাজনৈতিক জটিলতায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। মন্ত্রী মানেই সাধারণ জনপ্রিয়তা থেকে বিতর্কিত হওয়া । সেদিন থেকে আজ অবধি আমার মনে হয় কোনো জনপ্রিয় লেখক, অভিনেতা কিংবা শিল্পীর উচিত নয় রাজনীতি করা । যে বাকের ভাইয়ের মিথ্যা ফাঁসির অর্ডারে সারাদেশের মানুষ প্রতিবাদ মিছিল করেছিলো সেই বাকের ভাই মন্ত্রী হয়ে যেদিন সত্যি এরেস্ট হলেন তখন জনগণ নিরব । একজন উচ্চ সম্মানীয় মন্ত্রী মহোদয় হেরে গেলেন বাকের ভাইয়ের কাছে।
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।