বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর বৈষম্য ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে পোপ লিও চতুর্দশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, সুদানসহ কয়েকটি দেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং উপাসনাস্থলগুলোতে হামলার ঘটনা নিয়ে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যে, ঈশ্বর সকল সন্তানের মধ্যে শান্তি চান।
এই বার্তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা গুলো আবার প্রকাশ্যে আনলো যা দেশের ইমেজের জন্য বেশ ক্ষতিকর বলে মনে করা হচ্ছে।
রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৭তম পোপ লিও চতুর্দশ (জন্মনাম রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট) গত ৮ মে ২০২৫-এ পোপ নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম আমেরিকান পোপ এবং দ্বিতীয় আমেরিকান মহাদেশের পোপ (পোপ ফ্রান্সিসের পর)।
গত ১৬ই নভেম্বর সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে অ্যাঞ্জেলাস প্রার্থনার পর তিনি এই বার্তা পাঠ করেন, যা পরবর্তিতে পোপ এর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করা হয়:
“বিশ্বের বিভিন্ন অংশে খ্রিস্টানরা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমি বিশেষ করে বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, সুদান এবং অন্যান্য দেশের কথা ভাবছি, যেখান থেকে আমরা প্রায়ই সম্প্রদায় এবং উপাসনাস্থলগুলোতে হামলার খবর শুনি। ঈশ্বর একজন করুণাময় পিতা, যিনি সকল সন্তানের মধ্যে শান্তি চান!”
পোপ লিও চতুর্দশ আরও বলেন, “আমি প্রার্থনায় পরিবারগুলোর সাথে আছি, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে, যেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা ঘটেছে। আসুন আমরা প্রার্থনা করি যাতে সকল সহিংসতা বন্ধ হয় এবং বিশ্বাসীরা সাধারণ কল্যাণের জন্য একসাথে কাজ করেন।”
এছাড়া তিনি ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ, রাস্তা দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি এবং যৌন নির্যাতনের শিকারদের জন্যও প্রার্থনা করেন।
বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে পোপের এই বক্তব্য বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশে খ্রিস্টানরা মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৩% এবং তারা প্রায়ই সংখ্যালঘু হিসেবে বৈষম্যের শিকার হন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুল তথ্য এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর কার্যকলাপের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগস্ট ২০২৪ পরবর্তি সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রীষ্টানদের বসত পুড়িয়ে দেয়া, ঢাকা’র বিভিন্ন চার্চে ও চার্চ নিয়ন্ত্রিত স্কুলে ককটেল হামলার ঘটোনাগুলো বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ওপেন ডোরসের মতে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে খ্রিস্টান শিশু-কিশোররা স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন এবং গ্রামীণ এলাকায় বাইবেল পাঠ কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই বার্তা বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সংখ্যালঘু সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবিক অর্থে তেমন কোন প্রদক্ষেপ সরকারের তরফ থেকে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই সকল বার্তা দেশের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পোপের এই উল্লেখ বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে, প্রভাবিত করতে পারে এবং সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষণে আরও সক্রিয়তার দাবি তুলে ধরবে।
কলকাতা আর্চবিশপ কার্ডিনাল সেবাস্তিয়ান দ’সৌজা বলেছেন, “পোপের এই আহ্বান বিশ্বের সকল খ্রিস্টানদের জন্য একটি স্মারক যে, শান্তি ও সহিষ্ণুতা ছাড়া কোনো সমাজ অগ্রসর হতে পারে না।”
বাংলাদেশের খ্রিস্টান নেতারা এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়ে সরকারের কাছে সুরক্ষার নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
পোপ লিও চতুর্দশের এই উদ্বেগ বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত খ্রিস্টানদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের সাথে সাথে বাংলাদেশকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষায় আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
