বাঙালি মানেই আবেগে টইটম্বুর। আবেগকে পুঁজি করে নাকি অনেক কিছু করা যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ জিতে দূর আকাশের কোণে সেমিফাইনাল স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বাংলাদেশ। যদিও নিজেদের আবেগ সামলে মাঠের
পারফরম্যান্স বিবেচনায় তাদের ওপর ভক্তদের ভরসা রাখাটা যে বারবারই হতাশায় রূপ নেয়, তারই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ আজও দেখা গেলো।
কাকডাকা ভোর থেকে যারা প্রস্তুতি নিয়ে খেলা দেখতে বসেছেন, তাদের কষ্টটা অনেক বেশি। শত আবেগের সঙ্গে তীব্র প্রত্যাশা নিয়ে টেলিভিশন সেটের সামনে খেলা দেখতে বসে হৃদয় ভেঙে চুরমার। সেন্ট ভিনসেন্টের আকাশ বুঝি সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের জন্য কালো মেঘে ঢাকা পড়েছিল। আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে আটকে দিয়েছিল, সেমিফাইনালে যেতে ১২.১ ওভারে করতে হতো ১১৬ রান। এই টার্গেট কি বড্ড দুরূহ ছিল? টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসে যদি আফগানদের বিপক্ষে ওভার প্রতি ১০ এর ওপরে রান তুলতে না পারা যায়, তাহলে এতদিন ধরে খেলে এসে লাভটা কী হলো?
শুধু কি তাই! সেমিফাইনালে যেতে হলে যেমন ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে হতো, সেটা তা পারেইনি। ২০ ওভারের মধ্যেও আফগানদের অল্প পুঁজিকে পেছনে ফেলতে পারেনি। আগের মতোই বোলিংয়ে সফল তাসকিন-রিশাদরা। কিন্তু যাদের হাতে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাটন, সেই ব্যাটাররাই কিনা সেন্ট ভিনসেন্টের নীল জলরাশিতে সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছেন। সলিল সমাধি বলা যায়।
আফগানিস্তান যদি এত প্রতিকূলতা ছাপিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারছে না? যেই দলটি নিজেদের মাটির সোঁদা গন্ধ নিতে পারে না বছরের পর বছর, পরজীবী হয়ে অন্য দেশে অনুশীলন করতে হয়, হোম ম্যাচ খেলতে হয়, সেই দলটির টিম স্পিরিট আর পারফরম্যান্স তাদের কোথায় নিয়ে গেছে! আর বাংলাদেশ এত এত সুবিধা পেয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টিতেও বাজে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা দেখালো।
সাকিব আল হাসান-শান্ত-সৌম্যদের ওপর এত ভরসা করে যে দলের লাইনআপ সাজানো, তাদের কিনা আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত! শুধু আফগান কেন। নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল ছাড়া আর বাকি দলগুলোর বিপক্ষে ২৪ বছর ধরে টেস্ট খেলুড়ে দেশের হতশ্রী পারফরম্যান্স সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। যাদের নামের
পেছনে এত তকমা, দেশের মাঠে অনেক কিছু করে ফেলেন। তাদের কিনা একের পর এক বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় খাবি খেতে হয়।
এমন দুর্দশাগ্রস্ত ক্রিকেট দল বিশ্বে আর কোনোটি আছে কিনা সংশয় রয়েছে। বলতে পারেন পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড তো সুপার এইটেই উঠতে পারেনি। তারা এই বিশ্বকাপে নানান কারণে পারেনি। এই বলে তাদের ধারাবাহিক নেতিবাচক পারফরম্যান্স তো নেই। তাহলে বাংলাদেশের এমন কেন হবে? কীভাবে ম্যাচ জিততে হয় বাংলাদেশ কিন্তু তা জানে। বিভিন্ন সিরিজে তা করে দেখিয়েছে। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তা নিমিষেই ভুলে গেছে। এ নিয়ে সাকিব বা শান্ত কেউই কখনও সদুত্তর দিতে পারেননি। কোনও সময় এড়িয়ে গেছেন, আবার কেন এমন হচ্ছে তা নাকি জানেন না! আর আজ তো বিদায় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
প্রশ্ন হলো আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে খারাপ করতে থাকেন, তাহলে দুঃখ প্রকাশ করে বা ক্ষমা চেয়ে কি তাতে প্রলেপ
দিতে পারবেন? ক্ষমা চাওয়া যায় একটি বা দুটি ম্যাচের ফলকে কেন্দ্র করে। এই বলে টানা দুটি বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর এই দুঃখ প্রকাশ করা অনেকটা দায়সারার মতো।
যারা কাকডাকা ভোরে বসে খেলা দেখেছেন, অনেক আশা নিয়ে, তাদেরকে এভাবে আশাহত করাটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে স্বাভাবিকভাবে মুন্ডুপাত হচ্ছে। কেউ কেউ তো রাগ বা ক্রোধ থেকে বলছেন আর সাকিব- শান্তদের খেলা দেখবেন না।
বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদিদের আবেগকে পুঁজি করে যখন একের পর এক বাজে পারফরম্যান্স চলতে থাকে, তখন সমর্থকরা নেতিবাচক কথা বলবেনই। তবে এভাবে কতদিন বাঙালির আবেগ নিয়ে খেলবেন তারা? কবে আমরা পুরোপুরি নিজেদের দারুণভাবে গড়ে তুলে বিশ্বকাপের মতো আসরে অংশ নেবো, আশা অনুরুপ পারফরম্যান্স করতে পারবো! এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবেন?