।।জয় বাংলা প্রতিবেদন।।
সম্প্রতি আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আব্দুর রহমান বেঙ্গল ২৪কে এক সাক্ষাতকার দেন। এতে তাকে গত আগস্ট মাসে ঐতিহ্যবাহি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের সরকার সহসা ক্ষমতা থেকে সরতে হলোসহ আবার ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন।
বর্ষিয়ান এই আওয়ামী নেতা ধীরে সুস্থে উত্তর দেন।ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল।৭৫ বছর ধরে এই দলটি বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে একাত্তর সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে।৫ আগস্ট একটি তথা কথিত কোটা আন্দোলন যারা শুরু করেছিল, তারা মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তি,কোটা আন্দোলনের নামে তারা নেপথ্যে থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণকে উসকিয়ে ভাঙচুর, মানুষ হত্যা করে সরকারকে বিপাকে ফেলে। একই সময়ে আমাদের যে সেনাবাহিনি যারা রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্বে থাকার কথা, সেখানে দেখা গেল তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পক্ষান্তরে আন্দোলনকারিদের সহায়তা করলো। বঙ্গবন্ধুভবন তথা ’বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ পুড়িয়ে ফেললো, গণভবনে লুটপাট করলো, নানা স্থাপনায় আগুন দিলো, এই গুলোর সাথে বিদেশী ষড়যন্ত্রও যুক্ত ছিল বলে আমি মনে করি।তাদের অর্থাত সেনাবাহিনির চোখের সামনে একটি রাজনৈতিক অপশক্তি রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করলো, সেনাবাহিনি তা রক্ষা করেনি। আন্দোলনকারি জঙ্গীবাদীরা সাহস করতো না, যদি তারা সক্রিয় থাকতো। সেনাবাহিনি এখানে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ৪ আগস্টই বুঝতে পারছিলাম, দেশ একটি অশুভ শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন টুঙ্গিপাড়া চলেন যাবেন। ক্ষমতা থেকে সরে যাবেন।
মন্ত্রী আবদুর রহমান তিনি নিজে বিদেশ চলে যাওয়া সম্পর্কে বলেন, দেশে যে অরাজকতা চলছিল, এতে কোনো কর্মী নেতা জানমাল রক্ষা করতে পারছিল না।এই দূর্দিনে স্বভাবতই সরতে হয়েছে। আমিও সরেছি।
আরেক প্রশ্রে জবাবে তিনি বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকারকে তো আমরা মানিনা, এটি একটি অবৈধ সরকার, ক্ষমতা দখল করেছে।জবর দখল করা এই সরকারকে মানার প্রশ্নই উঠে না। ড. ইউনুস ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করেছে।অস্ত্রের মুখে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে দিয়েছে একটি মহল।
এই সরকার যে নির্বাচন করবে, কিভাবে করবে, তারা লুটপাট করছে, সাধারণ মানুষসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মারধর করছে, মানুষের ও সরকারি সম্পদ দখল করছে, অগ্নি সংযোগ করছে। তাদের নির্বাচন করার কোনো ক্ষমতাই নেই। সাংবিধানিক ভিত্তি নেই তাদের। বরং ড. ইউনুস নিয়মমাফিক রাষ্ট্রক্ষমতা শেখ হাসিনার হাতে সাংবিধানিকভাবে আবারও তুলে দেবার জন্য আমরা আন্দোলন করার জন্য সংগঠিত হচ্ছি। শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসবেন। মানুষকে আস্থায় নিয়েই আমরা পথ চলার চেষ্টায় আছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা দিকনিদের্শনা দিয়ে যাচ্ছেন, আমরা সেভাবে সংগঠিত হচ্ছি, কাজ করছি।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের শক্তি হলো দেশের জনগণ। আমি আশা করি, জনগণের ভালোবাসায় আবার আমরা বা আমাদের দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ভুল ব্যাখ্যা দেয়নি আওয়ামীলীগ। এসব অপপ্রচার। বরং অপপ্রচার জনগণই উড়িয়ে দেবে। এখন পাঁচ মাস পর জনগণই বলছে, আগের সরকারই ভালো ছিল। শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা, তিনিই দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারবেন।
তিনি অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকারের কাছে থাকা ও সরকারের প্রশ্রয়ে জঙ্গীবাদীদের দমণপীড়নের কারণে মানুষ মুখ খুলতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই যারা বলছে, আমার প্রশ্ন, তারা এই কথা বলার ক্ষমতা পেল কোথায়। তারা নিজেই দেশকে ধ্বংশ করে ফেলেছে। তারা পাকিস্তানের ভাবধারায় দেশকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রভু পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বলছে, তারা নাকি তাদের হারানো ভাই ফিরে পেয়েছে। সুতরাং এটা আর্ন্তজাতিক চক্রান্ত।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে আবার এদেরকে, জনগণই তাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে।অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও দেশ গড়ে তুলবে।
যারা অভিযোগ করেন, দলের ভেতরে দূর্নীতিবাজ রয়েছে, লুটপাট করেছে এতোদিন। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দলের ভেতরে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে দূর্নীতিবাজ লোকের, তা প্রমাণিত হলে আমরাও তাদের সম্পর্কে যে কোনো ব্যবস্থার নেয়ার পক্ষে।আমাদেরও আপত্তি থাকবে না। কিন্তু দূঢ়তার সাথে বলতে পারি, দলীয়ভাবে কেউ দূর্নীতি করেনি বা পদবাণিজ্যও করেনি। তিনি বলেন, কমিটি বাণিজ্য বা দলকে ব্যবহার করে কেউ হয়তো অর্থ বানায়নি। কেউ কেউ হয়তো সুযোগ নিয়ে কিচু অর্থ বানিয়েছে, তা থাকতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা, দল এতে জড়িত। দলের হাজার হাজার কর্মী ও নেতা অনেক কষ্ট করেছে, করছে, দলে অনেক ত্যাগীরা রয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজনীতিকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারে আমরা বিশ্বাস করি না। কিন্তু ভূয়া অভিযোগ দিয়ে আওয়ালীগকে কলংকিত বা কালিমালিপ্ত করা যাবে না। অশুভ শক্তির এসব অপপ্রচার ছিন্ন করেই আওয়ামীলীগ আবার দলকে সংগঠিত করবে, এই দিকনির্দেশনায় দলের কর্মী ও নেতারা কাজ করছেন।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবর্তন করার কথা কেউ কেউ বলছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে আবদুর রহমান বলেন, ঐক্যবদ্ধ একটি দল পরিচালনার দায়িত্ব দলের নেতা ও কর্মীরাই তৈরী করে। দল পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব শেখ হাসিনাকেই নেতা কর্মীরা সম্মেলনের মাধ্যমে দিয়েছে নিয়মতান্ত্রিকেভাবে। তাঁর নির্দেশেই দল চলছে।
দ্রুত দল পূর্ণগঠিত হয়ে মূল রাজনীতিতে ফিরে আসবে।আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলে কোনো আলাদা বলয় নেই।কোনো বলয় দ্বারা দল চলে না। এসব অভিযোগ মিথ্যা।
দলের নেতার্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ধৈর্য ধারণ করে, লক্ষ্য সঠিক রেখে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল বাধা অতিক্রম ও প্রয়োজন হলে বড় ধরণের ত্যাগ স্বীকার করে দেশ ও জনগণের কল্যানে কাজ করে যেতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত দলের কর্মী ও নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তাঁর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় সফল হওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। এই কঠিন সংগ্রামে আমরা অবিচল আছি।