ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি। সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান সিদ্দিক ববি, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট ১২৪ জনের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জে মামলা করা হয়েছে। ৪ঠা আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা, দেশীয় অস্ত্র, শটগান ও গুলিতে শিক্ষার্থী ও জনতাকে আহত এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এ মামলা করেছেন তহমুল ইসলাম মাজহারুল (২৭) নামে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত এক যুবক। মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন তিনি। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের উত্তর লতিবাবাদ গ্রামের আবু তাহের ভূঁইয়ার ছেলে ও বিএনপি’র একজন কর্মী।
এ ছাড়া মামলায় সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসান মাহমুদ ও নাজমুল হাসান পাপন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মুরাদ হাসান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমান, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মো. সোহরাব উদ্দিন, আফজাল হোসেন ও ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম, সিআইডি’র সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মসিউর রহমান হুমায়ুনকে আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ ১২৪ জনের নামোল্লেখ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান, শেখ রেহানাকে ২নং ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদকে ৩নং আসামি করা হয়েছে। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম ও একমাত্র মামলা। মামলার এজাহারে মো. আবদুল হামিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাসহ ২০ জনকে সারা দেশে গণহত্যার পরিকল্পনাকারী ও কিশোরগঞ্জে আন্দোলন দমাতে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, গত ৪ঠা আগস্ট বেলা ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়ে তহমুল ইসলাম মাজহারুলসহ কয়েকজনকে আহত করে। এলোপাতাড়ি গুলিতে তহমুল ইসলাম মাজহারুল মাথায়, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত পান এবং অসংখ্য গুলি তার মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে বিদ্ধ হয়।
মামলার অন্য আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এপিএস কাজী সেলিম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আনোয়ার কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুল, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত করিম অমি, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান প্রমুখ।
মামলার বাদী তহমুল ইসলাম জানান, তিনি আহত হিসেবে জুলাই ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য ও বিএনপি’র একজন কর্মী। আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার শরীরে অসংখ্য বুলেট বিদ্ধ হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও তার মাথায় একাধিক গুলি রয়েছে। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ বোধ করায় মামলা করেছেন। মামলায় প্রকৃত অর্থে যারা জড়িত, তাদেরই আসামি করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পুলিশ তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।