মুনসী বরকত উল্লাহ
সরকারের পক্ষ থেকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে, আওয়ামীলীগকে কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হবে না। তাই যদি হয়, তাহলে বাকস্বাধীনতা থাকলো কই? এটি প্রশ্ন এখন জনে জনে, সাধারণ নাগরিকদের। এক সময় নানা অভিযোগ তোলা হতো বিগত সরকারগুলোর ওপর, রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনের অবাদ সুযোগ সৃষ্টির দাবীর ফলাফল ২৪ আন্দোলনের তথাকথিত বিজয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, টুটি চেপে ধরার নতুন যন্ত্র এখন সক্রিয় হয়েছে, যে কথাই বলা যাবে না। মিছিলমিটিং তো দূরের কথা।
‘যে যায় লংকায় সে-ই রাবন’ কথাটি সত্য হলো। এবার সরকারের পক্ষ থেকে হুমকিদান করা হলো ‘আওয়ামীলীগকে কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হবে না। যারা এসব হুমকি দিচ্ছেন, বা দিতে পারেন, তারা কি ভেবে দেখেছেন, কোথায় ছিলেন তারা? কোথা থেকে এলেন?
দেখা গেছে, একাত্তরে যারা হত্যা খুন, নারী নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের দোসর বা তাদের মুখ থেকেই বেরুচ্ছে হুমকি।
ক‘দিন আগেই সোহরাওয়াদী উদ্যানে সিপিবির সম্মেলন হয়েছে। এ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর এই মাঠে পাকহানাদার বাহিনি আত্মসমর্পন করেছে, সেদিনের আত্মসমর্পন দলিলে ছিল, ‘আমরা ও আমাদের সহযোগী বাহিনি ও সংগঠন নি:শর্তভাবে আত্মসমর্পন করলাম।’ এই সহযোগী বাহিনি ও সংগঠন হলো জামায়াতে ইসলাম। বাংলাদেশে এইদিন থেকে পাক হানাদার বাহিনির কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়, সেই সঙ্গে তার সহযোগীদেরও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং জামায়াতে ইসলাম সেদিন তথা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ আইনত নিষিদ্ধ।’
আরেক সভায় একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চার খলিফা খ্যাত আ স ম রব বলেছেন, ‘জয় বাংলা’ আমাকে বলতে না দেয়া হলে ‘আমাকে ফাঁসি দিন’।
আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ জেড আই খান পান্না বিভিন্ন সময় টুটি চেপে ধরা নব্য হনুমানদের উদ্দেশ্য করে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, একাত্তরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টার পরিণাম ভয়াবহ হবে।
আলোচনার সূত্রপাত আজকের পত্রিকার অন্যতম বড় সংবাদ ‘আওয়ামীলীগকে কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হবে না’ থেকে। কথা তো ছিল ‘জামায়াত’ বা তাদের দোসরদের কথা বলার অধিকার নেই, এ ধরণের বক্তব্য দেখার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম এ বক্তব্য দিয়ে মূলত সরকারের বক্তব্যই যে এটি তা পরিষ্কার করলেন। সুতরাং দু কথা বলতেই হয়। বলতে হয় ‘কে তুমি?’
রাষ্ট্র বা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে বা রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে রাষ্ট্র বা সরকারবিরোধী যে কোনো কর্মকান্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করা। আওয়ামীলীগ তার ক্ষমতাকালে বিরোধীদের কর্মকান্ডকে এইভাবে চিহ্নিত করেই দমণপীড়ন করেছে। এতো তো ক্ষয়ক্ষতি হবেই। কিন্তু দেখা গেছে ঘনাসমূহের পানি অন্য দিকে গড়িয়েছে। সেটা হলো-‘সেনাবাহিনি।’ আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনি সরকারকে সুরক্ষা না দিয়ে বললো, আমরা জনগণের বিপক্ষে যায় এমন কোনো কাজ করবো না। তলে তলে মিটিং করলো জামায়াত ও জঙ্গীগোষ্ঠীদের সাথে সেনাপ্রধানসহ গোয়েন্দাগোষ্ঠী। যখন সেনাপ্রধান এ কথা প্রকাশ্যে বললেন, সেদিনই আন্দোলনকারিরা্ বুঝে নিলো, আর হৈ-হৈ করে বেরিয়ে গেল রাস্তায়। উঠে গেল ট্যাংকের ওপর।
অথচ, কেউই প্রশ্ন তুললো না, সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে পারেন না।এই দিন থেকে সেনা সমর্থিত জামায়াতপন্ত্রীরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান নেয়।
এখন হুমকি দিচ্ছে সেই সমর্থিত পাপেট গোষ্ঠী– ‘আওয়ামীলীগ হত্যার সাথে জড়িত’ তাদের কথা বলতে দেয়া হবে না। মিটিং মিছিল তো দূরের কথা। আবার তাদের এও কথা,‘আওয়ামীলীগকে নির্বাচনেও অংশ নিতে দেবে না।’
দেশ স্বাধীন করলো যে রাজনৈতিক সংগঠন নেতৃত্ব দিয়ে, সে রাজনতি করতে পারবে না, আপনারা কারা এ প্রশ্ন করার অধিকারতো দেশের জনগণের রয়েছে। নাকি তাও নেই?
‘বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার’এর কথা বলে যারা ক্ষমতা দখল করলো, তারা রাষ্ট্রে জনগণের সকল অধিকার ছিন্নভিন্ন করেই চলছে। বলতে ইচ্ছে করে ‘হায়রে ভজনালয়, তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়।’। আরো বলতে ইচ্ছে করে, ‘কার হুমকি, কেন হুমকি?’
লেখক: সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক। লন্ডন প্রবাসী।