মুনসী বরকত উল্লাহ
বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়ার গল্প ফেঁদে এক অরাজকতা সৃষ্টি করেছে ইউনুস সরকার। অভিযোগ উঠেছে, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, এনা, বসুন্ধরাসহ বহু প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংক খালি করে দিয়েছে। ব্যাংক খালি করে কে দিয়েছে?কিভাবে দিয়েছে? সে প্রশ্নটি কেউ করছে না। চাটুকার একটি গোষ্ঠী নানা নামে ট্রান্সফারেন্সির দোকান খুলে এর সাথে তালি দিচ্ছে। এর মধ্যে সিপিডি একটি। তারা নানা ভুয়া তথ্য দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করছে এসব প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। আরে মারলো কোথায় রে ভাই? প্রমাণ দেন।
প্রমাণ নেই, অথচ কী লম্ফঝম্প!আমরা আম পাবলিক অর্থনীতি যতটুকু বুঝি, তা হলো ব্যাংক নামক দোকান যারা খুলেছে তা মূলত ঋণ দেওয়ার জন্যে।ঋণ না দিতে পারলে তাদের ব্যবসা-ই নাই। তো ঋণ দিলো তো, বলা হচ্ছে মেরে দেয়া হয়েছে। এ কেমন জ্বালা!
গত সপ্তাহের খবর চট্টগ্রামে প্রায় ১৬টি এস আলম গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হওয়ার পথে। কয়েকটি বন্ধ হয়েছে ইতোমধ্যে। কারণ, বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। কেন? কেনর উত্তর হলো, সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংক হিসাব যদি জব্দ থাকে, তবে বেতন দিবে কোথায় থেকে। প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কর্মচারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে মিছিল,মিটিং করেছে বেতনের দাবীতে। পুলিশ দিয়ে ঠেঙিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষ অসহায় হয়ে জান বাঁচাতে খালি পেটে বাড়ি গেছে।
সরকার বলছে, এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধ করা হবে। আবার এও বলছে, কেউ যেন আলম গ্রুপের নিকট থেকে এসব প্রোপার্টি ক্রয করে না।নিষেধ করা হয়েছে। একইভাবে গাজীপুরে গত সপ্তাহে ৪০ হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে বেতনের দাবীতে। এখানে বেক্সিকো গ্রুপের ১৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এগুলোর ব্যাংক হিসাবও সরকার তদারকি করছে। সরকারের হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায়। বেতন দিতে পারছে না। অভিযোগ, বেক্সিমকো গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা মেরেছে।
কথা হচ্ছে, ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে। যেসব মালিক বা গ্রুপ এসব শিলপ গড়ে তুলেছেন তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্তাদের সাথে যোগসাজস বলেন, আর দেন দরবার বলেন, একটা ফয়সালার মাধ্যমেই ঋণ দেন বা নেন। এই লেন দেনে সব দেশেই কিছু অন্ধকার থাকে। টেবিলের তলে আরেকটা লেনদেন হয়। এটা অপেন সেক্রেট। এটা না হলে বাংলাদেশের মতো দেশে ঋণ নেয়ার সুযোগ ক্ষীণ। এটাকে মেরে দেয়া বলে না। ঘি হাতালে কিছু ঘি হাতে লাগেই। দেখতে হবে কত বেশি ঘি লাগলো, সেটা।
আমরা অর্থনীতিতে পড়েছি, জাতীয় বুর্জোয়া হলো জাতীয় মিত্র। আগে বুঝতে হবে জাতীয় বুর্জোয়া কাকে বলে। জাতীয় বুর্জোয়া হলো যে নাকি বিভিন্ন উপায়ে, এমনকি কালো টাকা দিয়েও যদি দেশে ইনভেস্ট করে, শিল্প গড়ে তুলে, দেশে বিনিযোগ করে, তবে সে চোর নয়, মিত্র। কেননা, সে কর্মসংস্থান করছে, ট্যাক্স দিচ্ছে, উতপাদন করছে, টাকা দেশের ভেতরে রাখছে, পাচার করেনি। তাকেই জাতীয় বুর্জোয়া বলা হয। সে জাতীয় মিত্র, শত্রু নয়।
এরকম ব্যাংকঋণ গ্রহিতা বেক্সিমকো, এস আলম, এনা, বসুন্ধরাসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান ফুলিয়ে ফাপিয়ে তাদের ঋণগ্রহণে নানা উপায় অবলম্বন করলেও তারা বিনিযোগ করেছে দেশে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, উতপাদন বাড়িয়েছে, রফতানিমুখী পন্য উতপাদনে দেশকে স্বাবলম্বী করেছে, এতে দোষ কোথায়?দোষ খতিয়ে দেখেন টাকা পাচার করছে কিনা। যদি পাচার করে থাকে, সেটার শাস্তি দেন্, শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখল বা বিক্রি করে নয়।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে বিনিযোগ করা যায় না, এ নীতিও আর গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা তো বিদেশ থেকে টাকা এনে দেশের অর্থনীতি চালু রাখছে বলে তৃপ্তি পাই। সে যোদ্ধা তো যে দেশে অভিবাসী সে দেশে শুধু চাকরি করে না, ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেই প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে দেশে টাকা পাঠায়। এখন, এমন দেশ আছে যদি পুঁজি নিয়ে যাওয়া যায়, তবে শিল্প গড়ে তোলার লোভনীয় সুযোগ দেয় সেসব দেশের সরকার। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে তো টাকা নেওয়ার রীতি নেই, তাহলে টাকা নেবে কিভাবে? তখন তো হুণ্ডির পথে পা বাড়াবে সুযোগ সন্ধানীরা। যেভাবে আমরা ইপিজেড তৈরি করে বিদেশী বিনিয়োগ পাওয়ার আশায় হা করে বসে আছি, সে রকম বিদেশীরাও বসে থাকে।
এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য দরকার আমাদের অর্থনীতিবিদদের। সরকারকে পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসতে পারেন দেশপ্রেমিক এমন গুণীব্যক্তিরা। কিভাবে বিদেশেও বিনিয়োগ করার পথ উন্মুক্ত করা যায়, সে পথ বাতলে দিতে হবে।
কিন্তু আমরা দেখি, একটি দালাল শ্রেণীর উতপাত। এই দালল শ্রেণী সব সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করে। দেশের মানুষকে ভুল বোঝায়। আর আমরা সরকার বদল হলেই শুনি অমুক অত হাজার কোটি টাকা মেরেছে, তমুক খেয়ে ফেলেছে ব্যাংক।
সাম্প্রতিক খবর, সরকার পরিবর্তন হতেই ইসলামী ব্যাংকগুলো পুনরায় দখল নিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। এটা নাকি তাদের মায়ের কোলে ফিরে আসা। হায়রে,কপাল, কত আর শুনবো এ জীবনে। ব্যাংক মারা, আর মায়ের কোলে আসার গল্প আমরা শুনতেই থাকবো।
যিনি হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেওয়ার গল্প তৈরি করছেন, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে দেশকে দেউলিয়া করতে পা বাড়িয়েছেন, তিনি ৬শ কোটি টাকা গরীবদের মেরে তুলতুলে গদিতে বসে লাফালাফি করছেন,আর বলছেন, অমুক চোর তমুক চোর! কী বিচিত্র এই দেশ বাবা!