মতামত
এমনিতেই সময়টা অস্থির। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটছে। পুলিশ, প্রশাসন পুরোমাত্রায় সক্রিয় নয়। নানা প্রশ্ন, অনিশ্চয়তা। তবে দুই-তিনদিনের বুলডোজার হামলায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে চরম। নতুন করে জেঁকে বসেছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। অনেকেই বুঝার চেষ্টা করছেন কী হচ্ছে? পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টা পর সরকারের বিবৃতি হাস্যকর শুধু নয়, এক ধরনের তামাশায় পরিণত হয়েছে। উল্লাসের নৃত্য দেখে সচেতন মহলে প্রশ্ন, দেশটা আসলে যাচ্ছে কোথায়? সরকারের ভেতরে যে আরেকটা সরকার কাজ করছে- এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর নানা পেশার মানুষ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, মবোক্রেসি দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। উদ্বেগ জানিয়েছেন মাওলানা মামুনুল হকও। চলমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সম্পত্তিতে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গতকাল বিকালে একটি বিবৃতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে শুক্রবার রাতে একটি বিবৃতি দেয় সরকার। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে। অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। পুরো পরিস্থিতিতে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে দু’টি পোস্ট করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সর্বশেষ পোস্টে তিনি বলেছেন, শান্ত হোন। সরকারকে কাজ করতে দিন।
এ পর্বের অবনতিশীল পরিস্থিতির শুরুটা অবশ্য বুধবার। শেখ হাসিনা ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দিবেন- এমন খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই ছাত্র- জনতার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ফেসবুক-ইউটিউবে একদল ব্যক্তি হাসিনার বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলার ডাক দেন। তবে উত্তেজিত জনতার হামলা-ভাঙচুর কেবল এখানেই থেমে থাকেনি। সুধাসদনসহ হামলা হয়েছে জেলায় জেলায়। আক্রান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর। এসব নেতারা অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো কর্মকাণ্ড প্রতিহত করবে। কিন্তু দৃশ্যত সরকার এসব বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ আন্দোলনের বিভিন্ন পক্ষ সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। উস্কানি দেয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িত কি-না সে প্রশ্নও উঠছে।
কিন্তু আইনের শাসনে আদালত ছাড়া আর কোথাও তো এসব ইস্যুর সুরাহার সুযোগ নেই। বরং বুলডোজারের ব্যবহার এবং মব অন্য কোনো পক্ষের জন্যই সুবিধা তৈরি করতে পারে।