কৌশিক মজুমদার
আমার মত ফাজিল লোকের পক্ষে চুম্বনের মত সিরিয়াস জিনিস নিয়ে লিখতে যাওয়া বাতুলতা।তবু প্রেম নিয়ে লিখেছি যখন এটা নিয়ে না হয় কিছু বলি।
ছোটবেলায় অনেকের মত আমারও ধারণা ছিল চুমু খেলেই বাচ্চা হয়। ফলে আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ার যখন বিয়ের বহুদিন পরেও সন্তান হচ্ছিল না এবং তিনি আমার মাকে বেদনাভরে সে সব বলছিলেন আমি বেঁড়েপাকার মত সেখানে মন্তব্য করেছিলাম “কেন পিসে কি তোমায় চুমু খায় না?” এই একটি মন্তব্যে মায়ের কানমলা ছাড়াও এটা রটে গেছিল যে আমি নাকি সঅঅব বুঝি। একটু তলিয়ে বড়রা দেখলেই বুঝতেন সব বুঝলে অন্ততঃ এই মন্তব্যটি করতাম না। তবে হ্যাঁ বন্ধু মহলে কিছুটা প্রতিপত্তি বেড়েছিল। চুমুর ইতিহাস অতি প্রাচীন। আমাদের বেদে নাকি প্রথম চুমুর উল্লেখ আছে। সুমেরীয় কীলক লিপি বা হায়রোগ্লিফের প্রেমের কবিতায় রীতিমত ফ্রেঞ্চ কিসের বর্ণনা পাওয়া যায়।মহাভারতে নানা টাইপের চুমুর বিশদ বিবরণ বিদ্যমান। ঐতিহাসিকরা বলেন আগে নাকি ইউরোপে এত চুমুর চল ছিল না। আলেকজান্ডারের বাহিনী পাঞ্জাবে এসে এসব দেখেশুনে চেখে গিয়ে ইউরোপে চুমুর প্রচলন ব্যাপক ভাবে করেন। রোমানরা তো আরও একধাপ এগিয়ে। তারা চুমুরই তিন রকম নাম দেন-
হাতে বা গালে চুমু হল অসকুলাম
ঠোঁট বন্ধ রেখে ঠোঁটে চুমু হল বেসিয়াম
আর ওই ফরাসী চুম্বন টাইপ হল সুভিয়াম।
মজার কথা বটতলা চুম্বন পদ্ধতি বা দেবতার পদচুম্বন কিন্তু অনেক পরে এসেছে। উনিশ শতকে তো রীতিমত চুমু গবেষণা চালু হয়েছিল। যাকে বলে Philematology।
চুমু নিয়ে সেরা কথাগুলো সম্ভবতঃ লিখেছিলেন শিব্রাম।
“কলকাতা থেকে নতুন গুড়ের সন্দেশ নিয়ে এসেছিলেন বাবা আমাদের জন্য। সকালে উঠে হাতমুখ ধুতেই মা দুটো বড় বড় তালশাঁস সন্দেশ খেতে দিলেন আমায়। অমনি আমি সেই সন্দেশ হাতে করে ছুটেছি রিনির বাড়ি। রিনিকে ভাগ না দিয়ে খাওয়া যায় ?আমি গিয়ে হাতের মুঠো খুলে দেখালাম রিনিকে। তক্ষুনি সে আমার হাত থেকে নিয়ে দুটো সন্দেশই মুখে পুরে দিয়েছে।
‘ওমা, আমি যে একদম খাইনি রে এখনো।’বলতেই না, সে মুখ থেকে বার করে আমার হাতে নয়, পাখি-মা তার ছানাকে যেমন করে খাওয়ায়, তেমনি করে তার মুখের গ্রাসের খানিকটা আমার মুখের মধ্যে পুরে দিয়েছে। মুখের ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে।
সেই প্রথম চুমো পাওয়া আমার জীবনে। সন্দেশের সঙ্গে মিশিয়ে চুমো খাওয়া সেই! প্রথম অমৃত আস্বাদের জন্য আমি রিনির কাছে চিরঋণী।
প্রথম চুমু ওমন করে সন্দেশের সঙ্গে মিশিয়ে পেয়েছিলাম বলেই কি ওই চুমু জিনিসটা এমন মিষ্টি থেকে গেলো আমার কাছে চিরদিন ?নাকি, চুমোর সঙ্গে মাখানো ছিল বলেই কি যতো মেঠাই এমন মিঠে লাগে আমার কাছে ?
তাই কি আমি এমন সৃষ্টিছাড়া মিষ্টিখোর হয়ে গেলাম জন্মের মতই ? কে জানে !”
চুমু নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়া মুশকিল।অন্য একদিন না হয় আরও কিছু বলা যাবে। বরং শেষের আগে একটা ঘটনা বলি।
সিরিয়াল কিলার নিয়ে একটা লেখা লিখতে গিয়ে পুরোনো লন্ডন নিয়ে পড়তে হল। তাতে দেখলাম জ্যাক দ্য রিপারের বহু আগে লন্ডনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এক অপরাধী। জ্যাক দ্য রিপারের মত সেও নাকি ধরা পড়ে নি।
১৬০০ সালের লন্ডন। মহিলারা সচরাচর লম্বা গাউনের নিচে আর কিছু পরতেন টরতেন না। তখনই এক অপরাধী নাকি অন্ধকার রাস্তায় ঘাপটি মেরে থাকত। কোন মহিলাকে একা পেলে চুপিচুপি পিছন পিছন আসত। আর সুযোগ পেলেই- মহিলার গাউন উঠিয়ে তাঁর নিতম্বে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে “SPANKO” বলে দৌড়ে পালাত।
লন্ডন পুলিস একে ধরতে পারে নি। তবে সে ব্যাটা ইংরাজিতে spanking শব্দটা চালু করে দিয়েছিল।
এইখানে আর একটা শব্দের উৎপত্তি না বললেই নয়।
মধ্যযুগের ইংরাজী গান Summer canon এ দেখি গ্রীষ্মকাল আসার অন্যতম লক্ষণ নাকি এই সময় the buck farts..হরিণ পাদে। চসারের ক্যান্টারবেরি টেলসে তো এই পাদকে কেন্দ্র করে লম্বা কাহিনি আছে। অ্যাবসোলন নামে এক যুবক অ্যালিসন নামের একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে। সে তাঁকে বলে রাতের অন্ধকারে জানলায় দাঁড়াতে, সে তাঁর মুখচুম্বন করবে। খবর পেয়ে অ্যালিসনের প্রেমিক জানলায় নিজ নিতম্ব বার করে বসে থাকে এবং অ্যাবসোলন চুমু খেলে এক মোক্ষম ভুসুকুপাদে তাঁকে ধরাশায়ী করে। গল্পটি ঐতিহাসিক। এর পর থেকেই ইংরাজিতে kiss the buttock বা পরে kiss the ass চালু হয়।
শেষে এক ঐতিহাসিক চুমু
১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট। সদ্য খবর এসেছে বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের। এক কথায় “অফিসিয়ালি” শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আমেরিকা সহ মিত্রশক্তি জয়ী হয়েছে। আর সেই আনন্দে টাইমস স্কোয়ারে উদযাপিত হচ্ছে Victory over Japan Day বা সংক্ষেপে V-J Day।
লাইফ পত্রিকার ফটোগ্রাফার আলফ্রেড আইন্সটাড ক্যামেরা নিয়ে তক্কে তক্কে ছিলেন যদি কোন ভাল ছবি পাওয়া যায়। হঠাৎ দেখতে পেলেন তরুণ এক নাবিককে। যুদ্ধ শেষের উত্তেজনায় সে প্রায় দৌড়ে আসছে, আর পথে বাচ্চা, বুড়ো যত মহিলাকে পাচ্ছে, জড়িয়ে চুমু খাচ্ছে আনন্দে। এমন সময় আইন্সটাড খেয়াল করলেন একেবারে ধবধবে সাদা পোষাক পরা এক নার্সকে। কেমন হবে যদি ওই গাঢ় পোষাকের ছেলেটি এই নার্সটিকে চুমু খায়? সাতপাঁচ না ভেবেই সেই নার্সের উপর ফোকাস করলেন আইন্সটাড।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সেই যুবক ছুটে এল নার্সের দিকে আর সে বেচারী কিছু বোঝার আগেই চকাম করে এক চুমু। অদ্ভুত টাইমিং-এ ঠিক সেই সময়ই ক্যামেরায় ক্লিক করলেন তিনি।
নিজের অজান্তেই তৈরী হল ইতিহাস। উঠল সেই ছবি, যা বিশ্বের সেরা আইকনিক দশটি ছবির অন্যতম।