সুষুপ্ত পাঠক
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের দায়ভার দিয়ে ৩২ নম্বর বাড়ি পোড়ানোর জাস্টিফাই করে নিজের বলদামি প্রকাশ করবেন না। এটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের হৃদপিন্ড ছিল। ৩২ নম্বর থেকে মুক্তি সংগ্রামে কি বক্তব্য আসে তা শুনতে জাতি কান পেতে থাকত। কারোর অপশাসনের কারণে মুক্তিযুদ্ধ আক্রান্ত হয় না। মুক্তিযুদ্ধ আক্রান্ত হয় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের হাতে।
একদম ঠান্ডা মাথায় ঘোষণা দিয়ে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও শেখ হাসিনার সুধাসদন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধটি ঠেকানোর কোন চেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা করেননি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা কেউ করেননি। হাসনাত আবদুল্লাহসহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা ৩২ নম্বর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচী দেয়। এই ফৌজদারী অপরাধটি সেনাবাহিনী পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে ঘটতে দিয়েছে। বাড়ি দুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত নিশ্চিত করে তারপর সেখান থেকে পুলিশ সেনাবাহিনী প্রস্থান করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনোই ইতিহাস ঐতিহ্য এভাবে রাষ্ট্রীয় মদদে ধ্বংস হতে দেয়া হয়নি। জিয়াউর রহমান, এরশাদও জানতেন ৩২ নম্বর বাড়ির ঐতিহাসিক মূল্য ও এর প্রতি কোন রকম রোষ দেখানো হবে ইতিহাসের কালপ্রিটের অংশ হওয়া। কিন্তু আফগানিস্থানে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারা বিশ্ব অর্থনৈতিক অবরোধের ধার ধারে না। বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। তারা জানে বিশ্ব রাজনীতিতে কেউ না কেউ ভিক্ষা দিবেই তাদের স্বার্থে। বাংলাদেশের শিবির হিযবুত তাহরীরের রাজনীতিও এটাই। চীন পাকিস্তান যতদিন আছে জিহাদীদের ভিক্ষাটিক্ষা জুটবে। কাল স্লোগান দিয়ে ৩২ নম্বরে শাবল দিয়ে ভাঙার দৃশ্য দেখে আপনি যদি বলে থাকেন, ঠিকই আছে, হাসিনা যা করছে তার ফল ভোগ করছে তাহলে ডিয়ার আপনি আপনার সর্বনাশের জন্য রেডি হোন! একটি ফৌজদারি অপরাধকে কারোর কর্মফল হিসেবে জাস্টিফাই করলে কাল আপনার পার্টি অফিস পুড়িয়ে দিলে একইভাবে আরেকজন জাস্টিফাই করবে।
এদেশ হাসনাতরা এখন বিএনপির অফিস পুড়িয়ে দিতে পারে। জিয়ার মাজারেও আগুন দিতে পারে। কারণ সেনাবাহিনী তাদের সঙ্গে আছে। ডিয়ার কমরেডরা, আপনাদের নিষিদ্ধ করা কিন্তু সময়ের ব্যাপার। পাকিস্তান আমলে একবার নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এবার তারাই ক্ষমতায়! ৩২ নম্বরের আগুন দেখে শেষ শীতের রাতের ওম যদি নিয়ে থাকেন তাহলে মনে রাখবেন লেপের তলায় নিজের অজান্তে আগুন লাগিয়ে বসে আছেন…।
দেশের উপর কি কি অবরোধ আসছে বা কি কি সমস্যা হতে পারে সেটি তো বলতে পারছি না- তবে এই পাসপোর্ট নিয়ে বাইরে গেলে লোকজন জিহাদীদের দেশের লোক হিসেবে নাক কুঁচকাবে, আগে ভিক্ষুক হিসেবে করুণা করত বা অবহেলা করত, এখন জিহাদী হিসেবে ঘৃণা করবে।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দিয়ে কোন আশাই করি না। এই নেতৃত্ব ইনুছ জামাত হিযবুত তাহরীর কোয়ালিশন শাসনের কিছুই ছিঁড়তে পারবে না। এদেশের মানুষ নিরবে তার প্রতিবাদটা জানায়। শেখ হাসিনার প্রতি জানিয়েছিল। আজ ৩২ নম্বরকে উল্লাস করতে করতে ধ্বংস করার জন্যও তারা ক্ষুব্ধ। এই ছাই চাপা আগুনে পুড়ে মরবে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সবাই। ভয়ানক হবে তাদের পরিণতি। আমার আশংকা।
দেশের বুদ্ধিজীবীরা যথারীতি মুখ বন্ধ করে আছেন। দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা চুপ করে আছেন। এই দেশে আর গান কবিতা নাটক সিনেমা হবে মনে করছেন? জেল থেকে ইনুছ সরকার আইএসপন্থী জঙ্গিদের একে একে ছেড়ে দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর তো জেল ভেঙে পালিয়েছে। হিসেবে আছে এগুলোর? জেলখানায় মাইক দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে এক জঙ্গিকে বের করে নিয়েছে জিহাদীরা। কাল ৩২ নম্বরে যে স্লোগান দিয়ে ভাঙার সময় নিজের প্রতিষ্ঠানের কথাটা ভাবেননি? ডিয়ার প্রথম আলো ডেইলি স্টার কি খবর আপনাদের? আগেও মৌলবাদীদের চক্ষুশূল আপনাদের হতে হয়েছিল। সেই মৌলবাদী লাল সালুদের এখনো জুলাই বিপ্লব বলে বলে ফোকাস করার পালা সাঙ্গ হলে এই একই রকম তাকবির দিয়ে প্রথম আলোর একটি একটি ইট খুলে নিলে কি বলে সেটা অপরাধ বলবেন? চোখের সামনে একটা ফৌজদারী অপরাধ দেখে চুপ থাকলেন। ফৌজদারী অপরাধের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচী সফলকারীদের বিরুদ্ধে আপনাদের ভাড়াটে লেখকরাও দুই লাইন লিখল না! একদিন নিজেদের জন্যও কাউকে খুঁজে পাবেন না লেখার জন্য!
নুরুল কবীর কি খবর? ইনুছ সাহেবের ইন্টারভিউর সময় একবারও প্রশ্ন করেননি মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনার উপর এত আক্রমন কেন। মুক্তিযুদ্ধ কি আওয়ামী লীগের সম্পত্তি? তাহলে প্রশ্ন করেননি কেন? কাল ৩২ নম্বর ভাঙা দেখে আপনার ভয় করেনি ওদের বিরুদ্ধে কথা বললে নিউএজের একটা ইটও আস্ত রাখবে না?
সর্বশেষ ৩২ নম্বরের ভাঙা বাড়ির চেহারাটা যারা দেখেছেন তাদেরও নিশ্চয় মনে হয়েছে যুদ্ধবিমান বুঝি বোমবিং করে গিয়েছে এমন অবস্থা হয়েছে। আমার অনুরোধ থাকবে ৩২ নম্বর ঠিক এভাবেই যেন থাকে। এভাবেই সংরক্ষণ করা হয়। একদিন এভাবেই এটা স্মৃতি জাদুঘর করা হোক। সেখানে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের, উপদেষ্টাদের সকলের নাম লেখা থাকবে এরা মুক্তিযুদ্ধের উপর ঘৃণাবশত আঘাত করেছিল।
লেখক: প্রাবন্ধিক, বিশ্লেষক।