চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা করে অভিযুক্তদের সহযোগী সন্ত্রাসীরা। তারা থানায় হামলার পাশাপাশি দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে থানার এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার করা উপ-পরিদর্শকের নাম আবু সাইদ। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাতেই ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে উত্তরা বিভাগ পুলিশ।
উত্তরা জোনের সহকারি কমিশনার সাদ্দাম হোসেন বলেন, একটি অভিযোগ পেয়ে তিন ছাত্রকে থানায় নিয়ে আসেন এসআই আবু সাঈদ। এতে বিক্ষুব্ধ হয় শিক্ষার্থীরা। খবর শুনে উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনারসহ ঘটনাস্থলে আমরা যাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এসআই আবু সাঈদ তাদের সঙ্গে ‘অপেশাদার’ আচরণ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো-তে প্রকাশিত এক সংবাদের বরাতে জানা যায়, চাঁদাবাজির অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে। আটক চাঁদাবাজরা হলেন- আইইউবিএর ছাত্র আসিফুল হক রবিন, উত্তরা টাউন ডিগ্রি কলেজের আকাশ ও গাজীপুরের বিএএসটির ছাত্র বাপ্পি।
বিকেলে উত্তরার গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে এই তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছে প্রথম আলো। আর অভিযানটি চালানো হয় উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানা-পুলিশের সমন্বয়ে। তাদের আটকের পর উত্তরা পূর্ব থানায় নেওয়া হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তরার অন্য ছাত্ররা তাদের ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
একপর্যায়ের তারা মহাসড়ক অবরোধ এবং উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশকে মারধর করে। এতে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মেহেদী ও এএসআই মহাদেব গুরুতর আহত হন। যদিও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহম্মেদ আলীর দাবি, থানায় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। কোনো আহতের ঘটনাও নেই।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগ পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন শিক্ষার্থীকে থানায় নেওয়া হয়েছিল। এতেই ঘটনার সূত্রপাত। রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, তারা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এসআই আবু সাঈদকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজারবাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। থানায় হামলার ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে।
রাতে সংঘাতের খবর পেয়ে উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানায় এসে আলোচনায় বসেন। পরে রাত ৯টার দিকে আটক ওই তিন চাঁদাবাজ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ছাত্রদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় থেকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ডিসি রওনক জাহান বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের (পুলিশের) ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা (ছাত্র-পুলিশ) বসে একটি সুন্দর সমাধান করেছি। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। ছাত্রদের আটকের ঘটনায় এসআই আবু সাঈদকে ক্লোজড করা হয়েছে। তারা উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান ও এসআই আবু সাঈদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা সেগুলো তদন্ত করে দেখছি।’
এডিসি আহম্মদ আলী বলেন, ‘ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং তিন ছাত্রকে থানায় ধরে নিয়ে আসার কারণে এসআই আবু সাঈদকে ক্লোজড করা হয়েছে। অপরদিকে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি’র বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সেই সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তের পর ডিএমপি কমিশনার ব্যবস্থা নেবেন।’