।। জয় বাংলা রিপোর্ট ।।
লন্ডন,আজ ২০ ফেব্রুয়ারি। রাত ১০টা। ১২টা ১ মিনিটে আলতাব আলী পার্কে বরাবরের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আসবেন রাজনৈতিক দল সমূহের কর্মী নেতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন, সর্বস্তরের প্রবাসী বাঙালি। কিন্তু এবার শহীদ মিনার পাদদেশ কি শান্তিপূর্ণ থাকবে? ইউটুবে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বিএনপির একটি সভায় বলছেন, ‘আলতাব আলী পার্কে শহীদ মিনারে আওয়ামীলীগ আসার চেষ্টা করলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।’ বিএনপি নেতা ড. মুজিবুর রহমানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। এতে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন,একত্র হয়ে সময় মতো তারা শ্রদ্ধা নিবেদনে আলতাব আলী পার্কে যাবেন। তারা এম এ মালেকের বক্তব্যের জেরে কোনো মন্তব্য করেননি।আওয়ামীলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা এমন বক্তব্যকে আমল দেননি।
অন্যদিকে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত যাতে না হয়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা জোরদার করেছে বলে জানা গেছে। শহীদ মিনার এলাকায় পুলিশী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় তা তারা বজায় রাখবেন।

রাত সাড়ে বারোটা এখন:
সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত আলতাব আলী পার্ক শহীদ মিনার পাদদেশে সহস্রাধিক প্রবাসী সমবেত হয়েছেন। মেট্রোপলিটান পুলিশ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলেছেন। সমবেতদের মধ্যে যেমন রয়েছেন রাজনৈতিক দল, তেমনি রয়েছেন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সৃশৃঙ্খলভাবে পুস্পস্তবক নিয়ে বেদীমূলে সবাই গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমে শহীদ মিনার কমিটি, পরে টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ এবং পরেই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, এরপর আওয়ামীলীগ,তারপর একে একে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনিতক দল ও সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
সাংবাদিক জুয়েল রাজ লাইভ ব্রডকাস্টিং থেকে থেকে দেখা যায়, আওয়ামীলীগের শতাধিক নেতাকর্মী পুষ্প সত্বক নিয়ে বেদীমুলে পৌছলে ‘জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান ওঠে। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গান ছিল সবার কণ্ঠে। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সমবেত উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির দেশ গঠন করা হবে।
একইভাবে বিএনপি ও মিছিল করে বেদীমূলে আসে। তারা জিয়া ‘খালেদা জিয়া’ এবং তারেক জিয়ার নামেও শ্লোগান দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুই দলই দীর্ঘ সময় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নেন ও নিজ নিজ দলীয় শ্লোগান দিতে থাকেন।রাত গভীর পর্যন্ত শহীদ মিনার এলাকা মানুষের পদধ্বনিতে শরগরম ছিল। একে একে পুষ্প স্তবক অর্পন করেন বাংলাদেশ সেন্টােরের নেতৃবৃন্দ,লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব, ব্রিটিশ- বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশন, ডায়াম্পরা৭১, হার্ট ৭১, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ শতাধিক সংগঠন।
তবে অধিক সিকিউরিটি থাকায় কোনো অঘটন ঘটেনি। সাংবাদিক আকরাম হোসেন লাইফ ব্রডকাষ্টিং থেকে বলেন, শোকাবহ একুশকে ভাবগম্ভীর পরিবেশের পরিবর্তে লন্ডনে উত্তেজনা পূর্ণ ছিল। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুটি দলের কর্মীদের মধ্যে পালটাপালটি শ্লোগান উপস্থিত লোকজন ও ব্রিটিশ মূলধারার পথচারি মানুষ ভালো চোখে দেখেননি বলে তিনি জানান।