অর্থনীতির সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকার কি সত্যিই পরিবর্তনে আগ্রহী, নাকি এটি নিছকই একটি প্রচারণার হাতিয়ার? বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য এবং সরকারি উপদেষ্টাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, সংস্কারের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে।
সোমবার এক সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের অনুপস্থিতি ইঙ্গিত করছে যে, সরকার আসলে এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না। রেহমান সোবহান বলেন, “আমি বলি না যে ওয়াহিদ এতে খুব সিরিয়াস। যদি থাকতেন, তাহলে আজ আমাদের সঙ্গে এখানে উপস্থিত থাকতেন।”
তার ভাষ্য, “আজকাল তারা (উপদেষ্টারা) খুব কাজে ব্যস্ত, এবং আমরা এসব (সংস্কার সুপারিশ) ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে পাস করতে যাচ্ছিলাম। যা হোক, আপনাদের (অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্স) এবং ওয়াহিদের জন্য শুভকামনা।”
অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই সুপারিশগুলো নিয়ে মোটেও আগ্রহী নয়। টাস্কফোর্সের সভাপতি কে এ এস মুর্শিদ জানান, মন্ত্রণালয়গুলো সুপারিশগুলো পড়ারও প্রয়োজন মনে করছে না, বরং উপদেষ্টারা চাইছেন টাস্কফোর্সই এসে ব্যাখ্যা করে দিক। মুর্শিদ বলেন,
“এক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘আপনারা এসে আমাদের বুঝিয়ে দেন, আপনারা কী লিখেছেন। আমাদের দু’পাতা পড়ারও সময় নেই।’”
যাদের সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পড়ার সময় নেই, বা কি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটা বোঝার সক্ষমতা নেই, তারা কিভাবে সংস্কার করবে, এটা নিয়ে সন্দিহান এই অর্থনীতিবিদ। ১২ সদস্যের টাস্কফোর্সের সভাপতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ সেখানে আরো বলেন, তাদের প্রস্তাব সব মন্ত্রণালয় ‘সিরিয়াসলি নেয়নি’।
প্রশ্ন হলো, যদি সরকার সত্যিই সংস্কারে আগ্রহী হয়, তবে কেন এই উদাসীনতা? রাষ্টের এই গুরুত্বপূর্ণ রুপান্তরে যেখানে সারা দেশবাসী তাকিয়ে আছে সব কিছুর সঠিকভাবে পরিচালিত হোক, সুন্দর ও গোছানো হোক রাষ্ট্রব্যাবস্থা, এটাকেই প্রাধান্য দেয়ার সময় কেন পাচ্ছেন না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা? এটাই তো তাদের প্রধান এবং একমাত্র কাজ হবার কথা ছিল!
কে এ এস মুর্শিদের ভাষ্য, “প্রধান উপদেষ্টা ইনফ্যাক্ট সকল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তত একটি হলেও সুপারিশ গ্রহণ করতে। যদিও সকল মন্ত্রণালয় সমানভাবে সিরিয়াসলি নেয়নি।
“এই সরকারে, ইন্টেরিম সরকারের আমলে ওরা কতটুকু কী করতে পারবে, আই থিংক তাদের ব্রেইন স্পেসের এখন প্রচণ্ড অভাব। এতগুলো কমিশন। তারপর আমাদের ফাইভ হান্ড্রেড রেকমেন্ডেশনস। তারা কোথায় যেতে চায়। কীভাবে এসব দেখতে চায় এবং কীইবা সেখানে মেকানিজম। এটা এক্সিস্ট করে না আসলে।”
অধ্যাপক রেহমান সোবহান স্পষ্ট করে দেন, এই সরকার সংস্কারের নামে একটি প্রচারণামূলক নাটক মঞ্চস্থ করছে। তিনি বলেন,
““দেখি অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কেউ সিরিয়াসভাবে সংস্কার প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে কিনা, যা তাদের জন্য টেবিলে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
অর্থাৎ, অন্তর্বর্তী সরকারের আসল উদ্দেশ্য সংস্কার নয়, বরং সংস্কারের আড়ালে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। সরকার কি সত্যিই পরিবর্তন চায়, নাকি তারা কেবল ‘দেখনদারি’ করতে ব্যস্ত? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।