বর্তমান ক্ষমতাসীন ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অবৈধ, দখলদার ও ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ‘অর্বাচীন’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আওয়ামীলীগ। ২৫শে ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই বক্তব্য প্রচার করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে:
অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার সকল ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতি ঘটেছে। যেকোনো বিষয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে বাংলাদেশের মানুষ। দেখে মনে হচ্ছে, দেশে কোনো সরকার নেই। প্রকৃতপক্ষে অবৈধ, অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতাদখলকারী গোষ্ঠীর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলেও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে ও ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখতে তাদের ছলচাতুরির অভাব নেই। সকল ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতার কারণে সৃষ্ট জনরোষ থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর দুরভিসন্ধি আঁটছে ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অবৈধ দখলদার সরকার এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাদের গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপে তা প্রমাণিত।
এতো ব্যর্থতার পর ক্ষমতা আকড়ে থাকার ঝোঁক থেকে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বেপরোয়া ও বেসামাল। তারই প্রতিফলন ঘটেছে গতরাতে এই অবৈধ সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি ভিত্তিতে আহুত সংবাদ সম্মেলনে।
পুরো সংবাদ সম্মেলনে সে অসংলগ্ন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রেখেছে। যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অব্যাহত চরমাবনতি রোধে কোনো আশার আলো দেখতে পায়নি দেশের মানুষ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে আওয়ামী লীগের ওপর যে দোষারোপ করার অপচেষ্টা করেছেন, তাতে ক্ষুব্ধ, আশাহত হয়েছে আপামর জনতা। সর্বত্র মানুষ এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। চরম আতঙ্কের মধ্যে বাস করছেন নাগরিকেরা। জনগণের জানমালের ন্যূনতম নিরাপত্তা নাই। গণশত্রুদের দ্বারা পরিচালিত গণবিরোধী সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি-ডাকাতি, চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি মবসন্ত্রাস নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন অবস্থায় গভীর রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা জাতির সঙ্গে তামাশার সামিল। সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, সে অবদমিত কোনো অতৃপ্ত প্রেতাত্মার প্রতিরূপ। ধ্বংস করা এবং ক্রোধান্বিত হৃদয়ে হিংসার বিস্তার ঘটানোই যার কাজ। তাই সে সংকট থেকে উত্তরণের সমাধান না দিতে পারলেও কোনো প্রকার তথ্য-প্রমাণ ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করতে পারে এবং এর মধ্যে দিয়ে দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েছে, সরকার প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে চায়। ফলে অপরাধীদের লালন-পালন কর্তা হিসেবে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে কিনা, জনমনে সেই প্রশ্নেরও উদয় হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়:
দেশের মানুষ সুস্পষ্টভাবে অবগত আছেন, এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে দেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি এমন ২৫০-এর অধিক জঙ্গি নেতাসহ দাগী আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার আপত্তিও আমলে নেয়নি সরকার। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দুই হাজারের বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র এ সকল সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনের লুট করেছিল। সেগুলো উদ্ধারে সরকারের কোনো তৎপরতা নেই। এরই ধারাবাহিকতায় বিডিআরের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যায় অভিযুক্তদের এবং গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যাকারীদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, বর্তমান সরকার দেশকে সন্ত্রাস ও উগ্র-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠীর দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সোচ্চার হওয়ায় তাদের উপরে অবর্ণনীয় জুলুম, নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
দেশবিরোধী এই অপশক্তি অবৈধভভাবে ক্ষমতা দখলের পর এমন একটি দিনও নেই, যেদিন আমাদের কোনো নেতাকর্মী হত্যা, নির্যাতনের শিকার হননি। পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় এবং আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য ভয়াবহ বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যখন আমাদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করা হয়। তখন এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয় যে, দেশে সংঘটিত সকল অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের নির্দেশনায় ও তাদের স্পন্সর্ড।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অবৈধ সরকারের অবৈধ উপদেষ্টার বেসামাল ও অর্বাচীন মন্তব্য দেশ ও জাতিকে আরো গভীর সংকটে নিপতিত করবে। আমরা এ ধরনের বালখিল্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দেশবাসীকে এই দেশবিরোধী অপশক্তির দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার জোরালো আহ্বান জানাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি আওয়ামী লীগের
Previous Articleসিলেটে জামায়াত আমিরের মেডিকেল কলেজ, চার্চের জমি দখলের অভিযোগ