শেষ হয়েছে লেখক-প্রকাশকের মহোৎসব অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। এবারের মেলায় বই প্রকাশের সংখ্যা এবং বিক্রি দুটোই কমেছে। মেলা নিয়ে লেখক-প্রকাশকের অসন্তোষের মধ্যেই গতকাল শুক্রবার পর্দা নেমেছে বইমেলার। গত বছরের তুলনায় এবার অমর একুশে বইমেলায় প্রায় সাড়ে চার শ বই কম প্রকাশিত হয়েছে।
গতকাল মেলার শেষ দিনে নতুন বই এসেছে ৩৩৫টি। এ নিয়ে ২০২৫ সালের বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৯৯টি। ২০২৪ সালে নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৭৫১টি। এর আগের বছর বই প্রকাশিত হয়েছিল তিন হাজার ৭৩০টি।
প্রতিবছরই সাধারণত বই প্রকাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিক্রিও বাড়ে। এবার গত বছরের তুলনায় ৪৫২টি বই কম প্রকাশিত হয়েছে।
গত বছর বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের বই বিক্রি হয়েছে।
এর আগের বছর ২০২৩ সালে বিক্রি ছিল প্রায় ৪৭ কোটি টাকা। এবার বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের বইমেলায় মোট কত টাকার বিক্রি হয়েছে তা জানানো হয়নি। তবে এবার শুধু বাংলা একাডেমি তাদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন থেকে বিক্রি করেছে ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই। ২০২৪ সালে মেলায় এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল বাংলা একাডেমি। এর আগের বছর ২০২৩ সালে তা ছিল এক কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই।
বইমেলার মোট বিক্রির তথ্য না জানানোর কারণ জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ড. সরকার আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রকাশকদের জরিপের কাগজ দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ফেরত আসেনি। এখন নিশ্চিত না হয়ে তো পরিমাণ বলা উচিত নয়।’
প্রায় সব প্রকাশক এবার বিক্রির পরিমাণ কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন। হাওলাদার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাকসুদ হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানান, শেষ দিন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনার আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ দিনেও হতাশ হতে হয়েছে। স্টল নির্মাণ, ভাড়া, স্টাফদের খরচ সব মিলে যে বেচাকেনা হয়েছে, তাতে তাঁর মন ভরেনি। তিনি বলেন, ‘অথচ গত বছর ১৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। এবার ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ টাকার বই বিক্রি হলো।’
গত বছর অধিবর্ষ (লিপ ইয়ার) হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ২৯ দিনের। গতবার মাসের শেষ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এ কারণে শুরুর দিকে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলে প্রকাশকরা পরের দুটি ছুটির দিন মেলা বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ তা মেনে নেয়। এ কারণে গতবার মেলা হয় ৩১ দিন। গতবারের তুলনায় এবার মেলা তিন দিন কম হয়েছে।
এবারের বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার ৮৪ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি, আর ইউনিট ছিল ৯৪৬টি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল ৩৬টি। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে ১৩০টি লিটল ম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত অনেক লিটল ম্যাগ স্টল খোলেনি। এ ছাড়া শিশু চত্বরে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১২০ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয় এবার। গত বছর শিশু চত্বরে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১০৯ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।
বইমেলায় বইয়ের সংখ্যা ও বিক্রি কম, প্রকাশকরা হতাশ
Previous Articleডিসেম্বরে নির্বাচন হলে নতুন তালিকাভুক্তরা ভোট দিতে পারবেন কি?
Next Article যুক্তরাজ্যে শনিবার থেকে ও বাংলাদেশে রোববার থেকে রোজা