ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অবৈধ, অসাংবিধানিক ও স্বাধীনতা বিরোধী খুনি ইউনুসের তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার নামধারী এই অপশক্তিকে রুখে দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির পটভূমি বা প্রস্তাবনা ঘোষিত হয় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ আজকের দিনে। ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পৃথিবী কাঁপানো ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির এই পটভূমি ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির পিতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আহ্বান ও নির্দেশনায় বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার উপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (Proclamation of Independence) প্রকাশিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম অন্তবর্তীকালীন সংবিধান। এই সংবিধানের আওতায়ই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় এবং তাঁর নামে ও তাঁর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার পর থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে বারবার ভুলুন্ঠিত করা হয়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ – এই ২১ বছরে এমনকি তার পরেও বাংলাদেশে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার বহু চেষ্টা হয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ম্লান করতে সংবিধানকে বহুবার ক্ষতবিক্ষত করা হয়।
বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্র ও সহায়তায় অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী এক জঙ্গি অপশক্তি খুনি ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। এই অপশক্তি ৫ই আগস্ট থেকে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আদর্শকে মুছে ফেলতে সারা দেশে একের পর এক পৈশাচিক তাণ্ডব চালায়। মূলত: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালীর বিজয়, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের সময় স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যেই দেশি-বিদেশি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সমন্বিত ভাবে আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আদর্শ ও চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করতে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে চায়।
এই দেশবিরোধী অশুভ কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে স্বাধীনতা বিরোধী এই অপশক্তি ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের পবিত্র সংবিধান ধ্বংস করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এই অপশক্তি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের ঔদ্ধত্য পর্যন্ত দেখিয়েছে।
এই অশুভ শক্তি মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আদর্শ ও চেতনার উপর ভিত্তি করে গৃহীত রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতিমালা বাতিল করতে শুরু করে।
এই অপশক্তি বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডি ৩২ এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবন প্রথমে পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, ম্যুরাল, ছবিসহ তার স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সারাদেশে জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় সরকারিভাবে তার নাম বাতিল করা হয়। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদের নাম মুছে ফেলা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বীরশ্রেষ্ঠগণ সহ মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলা হয়। এই অপশক্তি দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম পর্ব ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনার গুড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, দুর্নীতিবাজ ইউনুস হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, দুর্নীতির জন্য ইতোমধ্যে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত। বিদেশি ষড়যন্ত্র ও মদদে অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশ ধ্বংসের খেলায় মত্ত হয়েছে। এই খুনি দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেড় দশকে সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে এই খুনি ইউনুস। বিনিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা হাহাকার করছে। দেশের সাধারণ মানুষ সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।
সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল খ্যাত বাংলাদেশকে আজ বানিয়েছে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র। এই অপশক্তি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে। এই মানবতাবিরোধী অপশক্তির মদদে প্রতিদিন নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত সারাদেশে নারী ও শিশু ধর্ষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার কারণে নারীর ক্ষমতায়নের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে আজ নারীর মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত। নারীকে ঘরের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘোষণা চলছে চারিদিকে।
খুনি ইউনুস ও তার সহযোগী জঙ্গিগোষ্ঠীর মদদে দেশের কোথাও মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নেই। কারো জান মালের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর চলছে এদের সরাসরি মদদে। তাই এদের নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
দেশ ধ্বংসের খেলায় মত্ত এই খুনি ইউনুস পুলিশ হত্যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী ধ্বংসের নীল নকশার কাজ শুরু করে। পর্যায়ক্রমে এই বাহিনীর সকল পেশাদার ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাকে চাকুরীচুত করে। অনেককে গ্রেফতার করে। বাহিনীর নিজস্ব কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বেশ কয়েক বছর পূর্বে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে সম্পূর্ণ দলীয়করণের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী চালাচ্ছে। এই বাহিনী এখন মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নয়, বরং কেবলমাত্র খুনি ইউনুস ও তার সহযোগীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তাদের উপস্থিতিতেই গুলশানে ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়।
এই দেশবিরোধী শক্তি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিনিয়ত হেনস্থা ও বিব্রত করছে। তারা সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব ধ্বংসের পায়তারা করছে। খুনি ইউনূস ও জঙ্গি সহযোগীদের প্রত্যক্ষ মদদে বিদেশে অবস্থানরত কিছু চিহ্নিত সাইবার অপরাধী সেনাপ্রধান কে হত্যার হুমকি এবং সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাগণ সহ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অপপ্রচার করে যাচ্ছে।
খুনি ইউনুস চক্র দেশের সিভিল সার্ভিস ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা সকল জ্যেষ্ঠ মেধাবী ও পেশাদার কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করেছে। অসংখ্য কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে। অসংখ্য কর্মকর্তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বহুবছর পূর্বে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসন চালাচ্ছে। আবার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে নানা মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠাচ্ছে।
খুনি ইউনূসের নেতৃত্বে এই অপশক্তি দেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া চর দখলের মত দখল করে নিয়েছে। কোন গণমাধ্যম স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কিছু লিখতেও বলতে পারেনা। সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশের সর্বত্র সংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গেছে।
আইনজীবীরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে আদালতে যেতে পারছে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়াতে পারছেন না। উচ্চ ও নিম্ন আদালতের বিচারকরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কার্য পরিচালনা করতে পারছেন না। অবৈধ ও অসাংবিধানিক জঙ্গি অন্তর্বর্তী সরকারের অভিপ্রায়েই তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হয়।
আমরা মনে করি, এই বাংলাদেশ এভাবে আর চলতে পারে না। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে এভাবে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না। দেশের প্রতিটি নাগরিককে আজ দেশ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এই খুনি ইউনুস ও তার সহযোগী জঙ্গিগোষ্ঠীকে উৎখাত করে এ দেশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। তারিখ: ০৭ মার্চ ২০২৫