।। জয় বাংলা রিপোর্ট।।
মডেল মেঘনার গ্রেপ্তার সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি: আসিফ নজরুল ।।আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট
অভিনেত্রী ও মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি ১৩ই এপ্রিল, রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং সেসব অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে।

অন্যদিকে, জননিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে মেঘনা আলমকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের ভিত্তিতে কারাগারে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মেঘনা আলমের পক্ষে তার বাবা এই রিট দায়ের করেন, যার পক্ষে আইনি প্রতিনিধিত্ব করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার আদালত মেঘনা আলমকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য কারাগারে রাখার আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারায় জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ থেকে নিবৃত্ত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতা বলে তাকে আটক রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী তাকে পরে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৫ই অক্টোবর মেঘনা আলম “মিস আর্থ বাংলাদেশ” প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। তিনি পরিবেশ রক্ষায় ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে নতুন পণ্য তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছিলেন।
মেঘনা আলমের আটকাদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট
মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
আজ রবিবার এই আবেদনটি দায়ের করেন মেঘনা আলমের বাবা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার অন্যতম আইনজীবী কাজী জাহেদ ইকবাল।
তিনি জানান, বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি হবে।
কাজী জাহেদ ইকবালের ভাষ্য, ‘মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে যদি নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে প্রচলিত আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনে কেন তাকে আটক করা হলো?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, অস্বচ্ছ ও অস্পষ্ট এক অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। এজন্যই এই আটকাদেশের বৈধতা আমরা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছি।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে মেঘনা আলমকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আটকের আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিচয়ধারীরা তার বাসার দরজা ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাকে আটকের পরপরই প্রায় ১২ মিনিটের বেশি সময় চলা ওই লাইভ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তার ফেসবুক আইডি থেকে তা মুছে ফেলা হয়। তবে তার আগেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক মো. সেফাতুল্লাহ মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মডেল মেঘনা গ্রেপ্তারকাণ্ডে ডিবিপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত রেজাউল করিম
মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১২ই এপ্রিল, শনিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

আদেশে বলা হয়, রেজাউল করিম মল্লিককে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক স্বার্থে তাকে ওই পদেই রাখা হবে। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান সই করা এক আদেশে রেজাউল করিম মল্লিককে ডিবিপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ১৭তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের কর্মকর্তা এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সিআইডিসহ বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন।
গত বুধবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরার নিজ বাসা থেকে মডেল ও “মিস আর্থ বাংলাদেশ” বিজয়ী মেঘনা আলমকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরদিন রাতে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে, এই গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কারণ হিসেবে দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা ছাড়াই তাকে ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’ বা প্রতিরোধমূলক আটকাদেশের আওতায় নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে আইনি ও মানবাধিকার মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার ডিবিপ্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এলো। একইদিনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মেঘনা আলমকে আটক করার প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি।
মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা
মডেল মেঘনা আলমকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। সেদিন রাতেই মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে দুজনের মধ্যকার যোগাযোগের তথ্যও পায় পুলিশ।
আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট
বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিনেত্রী ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি রাজিক আল জলিলের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।