প্রয়াত কবি রফিক আজাদের ধানমণ্ডির বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায় ২৯ বছর সপরিবারে এই বাড়িতেই বাস করেছিলেন রফিক আজাদ। তার স্ত্রী দিলারা হাফিজ এখানে বসবাস করছিলেন। এই বাড়িটি দিলারা হাফিজের নামে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া।এ বাড়িতেই কবি রফিক আজাদ লিখেছেন ২০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ। আজ ১৬ই এপ্রিল, বুধবার সকালে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাড়িটির ভাঙার কাজ শুরু করে। চার ইউনিটের এই বাড়িটির একটিতে দিলারা হাফিজ থাকছেন এবং বাকি তিন ইউনিট অন্যদের নামে বরাদ্দ রয়েছে। বুধবার বাড়িটির পূর্বাংশের দুটি ইউনিট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধানমণ্ডির ১ নম্বর সড়কের এই বাড়ির (পশ্চিমাংশ) কমবেশি ৫ কাঠা জায়গা রয়েছে।
১৯৮৮ সালে একতলা এই বাড়িটি রফিক আজাদের স্ত্রী, কবি দিলারা হাফিজের নামে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় “এস্টেট অফিস।” তখন দিলারা হাফিজ ইডেন কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বরাদ্দ কপিতে দেখা যায়, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক এম বেগমের সই করা বরাদ্দনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল, “এই বরাদ্দের দ্বারা বাসার ওপর কোনো অধিকার বর্তাবে না, তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস করতে পারবেন।”
তবে, দীর্ঘদিন পর এক ব্যক্তি, সৈয়দ নেহাল আহাদ, বাড়িটি নিজের বলে দাবি করেন এবং ২০১২ সালে আদালত তার পক্ষে রায় দেয়। এ বিষয়ে দিলারা হাফিজ মামলায় যুক্ত হন, যার ফলে আদালত বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা দেন। পরবর্তীতে আদালত স্থিতাবস্থা স্থায়ী করেন।
এই মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সপ্তম সহকারী জজ আদালতে রয়েছে। আগামী মে মাসের ২৫ তারিখে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। দিলারা হাফিজ গতকাল মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সচিব এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পৃথক চিঠি দেন। এরই মধ্যে বুধবার সকালে বাড়িটি উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়।
জানা গেছে, দিলারা হাফিজ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক হিসেবে এই বাড়ির বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন।
তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদকসহ অনেক জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে তাদের দুই সন্তান, অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ, প্রবাসে রয়েছেন।
এ বিষয়ে দিলারা হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় জীবনে একজন অগ্রগণ্য কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদ। তার স্মৃতি সংরক্ষণ ও ধারণের জন্যে বাড়িটির অংশবিশেষের স্থায়ী বন্দোবস্তের আদেশ পেতে গতকালও আমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঘুরেছিলাম। মামলা চলমান থাকাবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে এটা আশা করিনি।”