যশোরে হতদরিদ্র ১৪টি পরিবারের জমির দিকে নজর দিয়েছে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ভূমিখেকো চক্র। জমি দখল করতে ব্যর্থ হয়ে সদর উপজেলার রূপদিয়া মধ্যপাড়ায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে তারা।
গত রোববার সকালে দেশীয় অস্ত্রসহ দুই ঘণ্টা ধরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। স্থানীয়রা বাধা দিতে এলে তাদেরও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, গুপ্ত সংগঠন জামায়াতের নেতাকর্মীদের ভূমি দখল এবং বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনও অসহায় ১৪টি পরিবার জামায়াতের সশস্ত্র সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মধ্যপাড়ায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করছেন ১৪টি ভূমিহীন পরিবার। এই জমির মূল মালিক ছিলেন সাঈদ বক্স, যিনি মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর জামায়াত নেতা খবির খাঁ ও তার অনুসারীরা জমিটি নিজেদের দাবি করে দখলের চেষ্টা চালায়। আদালতে মামলা করেও তারা ব্যর্থ হয়।
গত ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর থেকে জমি দখলের জন্য হুমকি দিতে শুরু করে সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা বারবার গ্রামে এসে হুমকি দিয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত গত ১৩ই এপ্রিল সকালে জামায়াতের ৬০-৭০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ১৪টি পরিবারের ওপর হামলা চালায়। তারা বসতঘর ভাঙচুর করে, লুটপাট চালায় এবং বাসিন্দাদের মারধর করে। নারীদের ওপর হাত তোলে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে হামলাকারীরা।
ভুক্তভোগীরা পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ এসে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পুলিশের সামনেই তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত রোববার রাতে ইজিবাইকচালক মিলন হোসেন কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা অধিকাংশই স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থক। মামলা করার পর থেকে মিলন হোসেন জামায়াতের লোকজনের হুমকির মুখে রয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং জেলা সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর নেতৃত্বে বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী মিলন হোসেন বলেন, ‘হামলা ও ভাঙচুরে আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার স্ত্রী সালমা খাতুনের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকার স্বর্ণের দুল, রাজিয়ার ঘর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, ইসমাইলের ঘর থেকে ৬০ হাজার টাকা, প্রিয়ার ঘর থেকে স্বর্ণের এক জোড়া কানের দুল, আনসারের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং আমার ঘর থেকে জিনিসপত্র ভাঙচুরের বাইরে নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করেছে তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত নেতা খবির খাঁ ও তার লোকজন এখনো আমাদের ঘরবাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।’
বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘এখানে যা হয়েছে, তা এক নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ। ঘটনার পরপরই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং আজ আবার এসেছি। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের দুর্বৃত্তদের দায় নিতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। জামায়াতে ইসলাম যদি এই দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়, তাহলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করবে।’
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘হামলার পরে আমরা কয়েকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন।’