।। সিরাজুল হোসেন।।
………. যদি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সত্যিই এমন একটি প্রস্তাব দিয়ে থাকে – যার আওতায় মিয়ানমারের আরাকান আর্মিকে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে সহায়তা করতে হয়, যেমন: তাদের জন্য রসদ পরিবহন, সীমান্ত ব্যবহার, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ড্রোন পরিচালনা করে মিয়ানমারের বন্দর ও সামরিক স্থাপনার ওপর নজরদারি চালানো—তাহলে সেটি শুধু একটি অসামরিক সহায়তা নয়, বরং আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতির পরিভাষায় একটি “লজিস্টিক এনএবলিং অ্যাক্ট” বা “ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার” ভূমিকা হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের সহায়তা নিরপেক্ষতার ভান ধরে রাখলেও, প্রকৃত বাস্তবতায় বাংলাদেশকে একটি হাইব্রিড ও প্রক্সি যুদ্ধের সক্রিয় পক্ষ বানিয়ে তুলবে।
উল্লেখ্য যে মিয়ানমারের রাখাইনে কিয়াকফিউ সমুদ্র বন্দর ও সেই বন্দর থেকে চিনের কুনমিং পর্যন্ত চীন সরকারের জ্বালানি পাইপলাইন রয়েছে, রয়েছে একটি নৌবাহিনী ঘাটি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর সাথে রাখাইনে রয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত সিটউই সমুদ্র বন্দর এবং তার সাথে যুক্ত ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড বহুমুখী সংযোগ। চীন ও ভারতের এই কৌশলগত অবকাঠামো এখনও মিয়ানমার জান্তার নিয়ন্ত্রণে আছে তবে যে কোন সময় সেগুলো হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সেই কারণে চীন ও ভারত মিয়ানমারের জান্তা ও আরাকান আর্মি উভয়ের সাথেই সম্পর্ক রেখে চলেছে। ওদিকে চীনের জন্য কিয়াকফিউ সমুদ্র বন্দর ও কুনমিং পর্যন্ত জ্বালানি পাইপলাইন অতি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত নিরাপত্তার অংশ। যেটি রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি আমদানীর মালাক্কা প্রণালী পথের একটি বিপদকালীন বিকল্প। চীন কোনভাবেই এই বিকল্প হাাতে চায় না আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামরিক উৎসাহের প্রধান কারণ এই কিয়াকফিউ সমুদ্র বন্দর হয়ে চীনে জ্বালানি সরবরাহ ধ্বংস করা। বাংলাদেশে ২০২৪ এর সরকার পরিবর্তনের মার্কিন উৎসাহের প্রধান কারণ এটা।
যদিও জাতিসংঘের মাধ্যমে এই করিডোর স্থাপনের প্রস্তাব, যার সাথে মানবিক আবরণে মার্কিন নরম যুদ্ধ সহায়তার প্রস্তাব আপাতদৃষ্টিতে নিরিহ প্রকৃতির বলে মনে হতে পারে, তবে এগুলো বাংলাদেশকে একটি জটিল ও বিপজ্জনক “স্টিকি ডার্টি ওয়ার” এর সাথে জড়িয়ে ফেলবে এবং যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।