চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গুরুতর অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
সংগঠনটির মতে, ‘সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র ইসকন অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে এই ঘটনায় ভিত্তিহীনভাবে আসামি করা হয়েছে, যা আইনের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থী।
৫ই মে, সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে সংগঠনটি জানায়, আলিফ হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংস ও নিন্দনীয় অপরাধ হলেও ঘটনার সময় চিন্ময় কৃষ্ণ আইনানুগভাবে অন্য মামলায় বিচারিক হেফাজতে ছিলেন। ফলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কোনো সুযোগই পাননি। তবুও তাকে মামলায় অভিযুক্ত করা ‘অন্যায় ও আইনের অপব্যবহার’ বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী তখন অন্য মামলায় আইনানুযায়ী বিচারিক হেফাজতে ছিলেন। ফলে ঘটনার সময় তিনি কস্মিনকালেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এমন একজন কারাবন্দিকে এই মামলার আসামি হিসেবে দেখানো “actus reus” (অপরাধমূলক কার্য) ও “mens rea” (অপরাধমূলক মনোভাব) -এর ন্যূনতম বৈশিষ্ট্যস্বরূপ আইনি ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জ করে।
তারা বলেন, আইন অনুযায়ী, বিচারিক প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হলে প্রমাণ, উপস্থিতি এবং সংশ্লিষ্টতার নির্ভরযোগ্য ভিত্তি আবশ্যক। কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পূর্বে তার বিরুদ্ধে অপরাধে সংশ্লিষ্টতা বা সহায়তার বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য তথ্য থাকা আবশ্যক। অন্যথায় তা আইনবহির্ভূত হয়রানি হিসেবে গণ্য হবে, যা Article 27 (সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান) এবং Article 31 (নাগরিকদের আইনি সুরক্ষা) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে:
১. আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
২. চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ভিত্তিহীন মামলা আইনানুগ প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো নাগরিককে হয়রানি করা চলবে না; এ ধরনের আচরণ গণতান্ত্রিক আইনের পরিপন্থী।
৪. আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বিচারব্যবস্থা হতে হবে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত। অন্যথায়, এর ফলে জনআস্থা বিনষ্ট হবে এবং ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
পরিশেষে সংগঠনটি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার ঘোষণা দিয়ে প্রয়োজনবোধে আইনি সহায়তা প্রদানেরও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
প্রতিবাদে সাক্ষরকারীরা:
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দায়িত্বশীল, প্রগতিশীল ও ন্যায়নিষ্ঠ সদস্যবৃন্দ।