দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সময়কার নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। অভিযোগের সত্যাসত্য নিয়ে বিতর্কের মাঝে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি সুবিধা নেওয়ার দীর্ঘ তালিকা সামনে এসেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে অতীতে কোনও শাসকের বিরুদ্ধে এত অল্প সময়ে সরকারি সুবিধা নেওয়ার এমন নজির নেই।
বৃহস্পতিবার ইউনুস সরকার দশ মাস পূর্ণ করেছে। গত বছর ৮ অগাস্ট তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে জামিনে মুক্ত ছিলেন। তাঁর কোম্পানি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারীদের প্রাপ্য অর্থ আত্মসাতের মামলায় ঢাকার আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দিয়েছিল। ওই মামলার কারণে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা করতে আপত্তি করেছিলেন। ছাত্র নেতৃত্ব বেঁকে বসায় সেনাপ্রধান আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন।
দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ইউনুসের বিরুদ্ধে থাকা শ্রম আদালতের মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সরকার পক্ষ। হাসিনার কর্মচারীদের হয়ে সরকারই আদালতে মামলা লড়ছিল।
মামলা প্রত্যাহার করে শুধু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করাই নয়, ইতিমধ্যে ঢাকায় গ্রামীণ ইউনিভার্সিটির অনুমোদন দিয়েছে তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা মণ্ডলীর বৈঠকে।
বিদেশে চাকরি করতে যেতে ইচ্ছুক বেকারদের থেকে অর্থের বিনিময়ে পাঠানোরজন্য গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস নামে একটি জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স দেওয়া হয় ইউনুসের মূল কোম্পানি গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ ফোনকে। পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকমের ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি পেয়েছে ইউনুসের সংস্থা।
আরও সুবিধা নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কর মকুব করিয়ে নিয়েছেন সরকারি নির্দেশিকা জারি করে। এছাড়া তাঁর কোম্পানিতে সরকারিভাবে ব্যাঙ্কের শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে দিয়েছেন। এতে কোম্পানিতে তাঁর দখলদারি আরও বেড়ে গিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই সব সুবিধার বিনিময়ে ইউনুস কয়েক হাজার কোটি টাকার সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। শেখ হাসিনা অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন, ইউনুস বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। সময়মতো দেশ ছেড়ে পালাবেন।
ইউনুসের মুখপাত্ররা বাংলাদেশের দায়িত্বশীল মহলের এই সব অভিযোগের কোনও জবাব দেয়নি এখনও। তবে সরকারিভাবে মুখ না খুললেও ইউনুস অনুগামীদের বক্তব্য, যে সব সুবিধা প্রধান উপদেষ্টা নিয়েছেন সেগুলি সাধারণ নিয়মেই তাঁর প্রাপ্য। বিগত সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সেগুলি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। (দ্য ওয়াল ব্যুরো)