২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত সাত বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, যা অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপের শঙ্কা তৈরি করছে।
সরকারি খাতে ঋণ ৮৪ বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সরকারি খাত নিয়েছে ৮৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের প্রায় ৮১.৫ শতাংশ। বাকি ১৯ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে বেসরকারি খাত। এই সময়ে সরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে এবং বেসরকারি খাতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে।
সুদ পরিশোধের চাপ বাড়ছে
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান ঋণ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতি আগামী দিনে চাপে পড়তে পারে। কারণ, ২০২৭ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
এলডিসি উত্তরণে বাড়বে ঋণের খরচ
বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করছেন যে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া স্বল্পসুদের ঋণ সুবিধা হ্রাস পাবে। এর ফলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বৈদেশিক ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলেও এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বিপদ ডেকে আনতে পারে। ঋণের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় এবং রিটার্ন নিশ্চিত না হলে এই ঋণ ভবিষ্যতে বোঝায় পরিণত হতে পারে।
তাদের মতে, এখনই সময় সুস্পষ্ট ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন, উচ্চ সুদের ঋণ পরিহার এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর। বিশেষত এলডিসি উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক ঋণপ্রদানকারীদের কাছ থেকে আগের মতো সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যাবে না, তাই দায়িত্বশীল ঋণ গ্রহণ এবং সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।