।। মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ।।
“বলা হচ্ছে, বিএনপি ১/১১ ডেকে আনছে। খুব অদ্ভুত অভিযোগ। বরং— সরকারের ছলচাতুরি, জামাতের আস্ফালন, এনসিপির বাড়াবাড়ি, জঙ্গিবাদের আস্কারা, এগুলোই ১/১১ ডেকে আনছে। এবং এটাই সত্য। নিজের ব্যর্থতা আমরা খুঁজে দেখতে চাই না। সবসময় দুর্ঘটনার দায় রিকশার উপর চাপাতে চাই। বিএনপি কি রিকশা?
কিছুদিন আগে বললো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করলে দেশ বেহেশত হয়ে যাবে। কই, হচ্ছে না তো? আওয়ামী লীগের ভয় এখন আরও বেশি দেখানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ করেও ঘুমোতে পারছে না। বিপ্লবীদের পতন হয় প্রতিশোধস্পৃহার কারণে। প্রতিশোধস্পৃহাই ছাত্রদের রাজনীতিক মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
বহু ঘটনা ঘটেছে, ১১ মাসে, যা অধ্যাপক ইউনূস ঘটতে দিয়েছেন। এগুলোর দায় কে নেবে? গতকালও টাঙ্গাইলে, গাজী-কালু-চম্পাবতীর মেলা জামাত-শিবির পণ্ড করে দিয়েছে। বিএনপিকে এর দায় দেওয়া যাবে? ইউনূসের পাণ্ডারা, যারা বিশেষ সহকারী, কেশ সচিব, ও কুপদেষ্টা সেজে মাতব্বরি করছে, টর্ট অভ নেগলিজেন্সে তাদের বিচার হতে পারে। জনগণ তো নির্বাচনের পর তাদের বিচারের দাবি তুলবে। অনেকে এখনই তুলছে। পুলিশ বাহিনী নির্বাচিত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশহত্যার বিচার করতে বলবে, এবং বিচার হবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ লাগবে না।
শহীদ ব্যবসা, জুলাই ব্যবসা, আবেগের সব ব্যবসা এরা করলো, সকল রসগোল্লা নিজেরা খেলো, কিন্তু দোষের বেলায় সব ভাগ বিএনপির। বিএনপি নাকি সহযোগিতা করছে না! বিএনপি আর কতো সহযোগিতা করবে? একটি রাজনীতিক দলের প্রধান লক্ষ্য কী? নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচন চাইছে। এটা অপরাধ? এক সিঁকি দুই সিঁকি ওজনের দলগুলোও নির্বাচন চাইতো, যদি জানতো মানুষ তাদের ভোট দেবে। তারা চাইছে না, কারণ জানে, ভোটের বাক্সে তাদের পান্থাভাতের থালাটি শুকনো। মরা। ওখানে মাছিও বসে না। এই থালাপার্টিই সংস্কার সংস্কার করছে। নির্বাচন বিলম্বিত করে উপভোগ করতে চাইছে অনানুষ্ঠানিক ক্ষমতা। সাথে যোগ দিয়েছে বিদেশফেরত টাক্কুবাহিনী।
এই টাক্কুচক্রই ইউনূসকে নষ্ট করেছে। সম্ভবত নষ্ট হতেই তিনি পছন্দ করেন। কিছু বললেই, আমি তো রাজনীতি বুঝি না! রাজনীতি বুঝেন না, কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। বেশ কালারফুল প্যারাডক্স। টাক্কুবাহিনী প্রচার করছে, স্যারকে খুব দরকার, স্যার গেলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। দেশের সর্বনাশের আর কী বাকি আছে? দেশে নজিরবিহীন মব ভায়োলেন্স চললো, কতো মানুষ মারা গেলো, কতো সম্পত্তি ধ্বংস হলো, তাঁর মন খারাপ হলো না, কিন্তু নির্বাচন চাওয়ায় মন খারাপ হয়ে গেলো! বাদশা সোলায়মানের একটি পাখি ছিলো, যেটি অন্য পাখি মারা গেলে গান গাইতো, এবং ডিম ফুটে নতুন পাখির জন্ম হলে কান্না করতো। অধ্যাপক ইউনূস কি সোলায়মানের পাখি নাকি? তাই তো মনে হচ্ছে।
তাঁর পদত্যাগে আমাদের, বাংলাদেশের, জনগণের, কারও কিছু আর আসে যায় না। সবাই তাঁর উপর বিরক্ত। তিনি বিদায় নিলেই দেশ বাঁচে, মানুষ বাঁচে। আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। এবং তা অধ্যাপক ইউনূসের চোখের সামনেই হয়েছে। তিনি ত্রাতা হতে পারতেন, কিন্তু হয়েছেন যাঁতা। মনে হচ্ছে, জনগণ সুপাড়ির মতো তাঁর যাঁতাকলে আটকে আছে।” ২৩ মে ২০২৫