ইউরোপের ৪৬টি দেশের আইনজীবী সমিতি ও বার কাউন্সিলসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা কাউন্সিল অব বার্স অ্যান্ড ল’ সোসাইটিজ অব ইউরোপ (সিসিবিই) বাংলাদেশে আইনজীবী ও প্রশিক্ষণার্থী আইনজীবীদের ইচ্ছাকৃত গ্রেপ্তার ও আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এক চিঠির মাধ্যমে সংস্থাটির সভাপতি থিয়েরি উইকার্স বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আইনজীবী রেজাউল করিম এবং প্রশিক্ষণার্থী আইনজীবী কামাল হোসেন পালাশ ও মুনতাকিম শুভর ওপর চালানো আইনবহির্ভূত পদক্ষেপগুলো মানবাধিকার ও আইনের শাসনের চরম লঙ্ঘন।”
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কুমিল্লা জেলা বারের সদস্য রেজাউল করিমকে গত ১৩ই মে কুমিল্লা শহরের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, অভিযোগ— তিনি ভার্চুয়াল এক সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাকে আইনবহির্ভূতভাবে গ্রেপ্তার করে নাশকতার অভিযোগ আরোপ করে গত ১৪ই মে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে, যশোরে বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় ৫ই জানুয়ারি প্রশিক্ষণার্থী আইনজীবী কামাল হোসেন পালাশকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে যশোরের আইনজীবী ভবনের সামনে থেকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলার সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের ৪ঠা আগস্ট বিএনপি নেতা এম.এ. গফুরের দায়ের করা একটি মামলার ভিত্তিতে।
তৃতীয় ঘটনায়, ৩রা নভেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রশিক্ষণার্থী আইনজীবী মুনতাকিম শুভকে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কোনো পরোয়ানা বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুলাই আগস্টের সহিংস আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভুয়া অভিযোগে রাজনৈতিক চাপে শুভকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত দেখানো হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গত ৫ই নভেম্বর কক্সবাজার জেলা বারে সব রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরা প্রতীকী হাতকড়া পরে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেন।
সিসিবিই অভিযোগ করেছে, এসব গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আইন-পেশাজীবীদের বৈধ পেশাগত কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টির শামিল।
সংস্থাটি জাতিসংঘের ‘আইনজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কিত মৌলিক নীতিমালা’র (Principles 16, 17, 18 ও 23) উল্লেখ করে বলেছে, এসব গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে, এই তিন আইনজীবীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং তাদের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করতে।
সিসিবিই আরও মনে করিয়ে দেয়, “আইনজীবীরা যেন নির্ভয়ে ও হস্তক্ষেপহীনভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে আইন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।