চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ছেঁড়া পাতা, অস্পষ্ট ছাপা, নিম্নমানের কাগজে ছাপানো পাঠ্যবই—এটাই এখন বাংলাদেশে শিক্ষার বর্তমান চিত্র। অথচ এই বইগুলো ছাপাতে খরচ হয়েছে ১,৭৫০ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠছে—এই বিপুল ব্যয়ের দায় কে নেবে? আর এই জাতীয় বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে কারা?
এই ভয়াবহ দুর্নীতির দায় কোনো একক মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তার নয়। এর মূল দায় বর্তমান ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপরেই বর্তায়। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই এর কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জবাবদিহি নেই, নৈতিক বাধ্যবাধকতাও নেই। ফলে শিক্ষার মতো মৌলিক খাতেও চলছে নির্লজ্জ লুটপাট।
একটি প্রজন্মকে ছেঁড়া বই ধরিয়ে দিয়ে এই সরকার তার ভবিষ্যৎই ছিঁড়ে ফেলছে।
দরপত্র অনুযায়ী বই ছাপা হওয়ার কথা ছিল ৮০ জিএসএম কাগজে। কিন্তু ২৯টি প্রতিষ্ঠানের একটি চক্র ৫৬-৭৫ জিএসএম পাতলা কাগজ ব্যবহার করেছে—যা হাতে ধরলেই ছিঁড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি নিম্নমানের বই ছেপেছে অ্যারিস্ট্রোক্রেট প্রিন্টিং—প্রায় আড়াই লাখ কপি। বাকিরা হল পাঞ্জেরি, দিগন্ত, আমাজন, টাঙ্গাইল অফসেট প্রভৃতি। কাগজের মান তো বটেই, বাঁধাই, কাটিং, ছাপার মান—সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা।
সরকার অনুমোদিত তদারকি সংস্থা হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন তাদের প্রতিবেদনে এসব অনিয়ম তুলে ধরলেও এনসিটিবি ও ইউনুস প্রশাসন এখন উল্টো সেই সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অভিযুক্ত মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, শুধু কথার কথা—জামানতের ২০% কেটে রাখা হবে।
এই কি শাস্তি? এই কি জবাবদিহি?
ড. ইউনুসের সরকার যেভাবে ব্যাংক, অর্থনীতি, শ্রমবাজার ও গণমাধ্যম দখল করছে, সেভাবেই শিক্ষা খাতকেও এখন পরিণত করেছে ব্যক্তিগত মুনাফার যন্ত্রে।
শিক্ষা খাতে এমন চরম দুর্নীতির অর্থ হলো—এখন এই সরকারের কাছে শিশুদের ভবিষ্যৎও নিরাপদ নয়। পাঠ্যবইয়ের নামে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ছেঁড়া কাগজে ছাপা অন্ধকার। এর দায় শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়, পুরো ইউনুস প্রশাসনের।
যখন দেশে জ্বালানি থেকে ওষুধ পর্যন্ত সবকিছুর দাম বাড়ছে, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়ের বাজেট কাটছাঁট হচ্ছে—তখন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে জনগণের করের টাকায় ছাপা হচ্ছে দুর্নীতির বই।
এটা ব্যর্থতা নয়, এটা রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্য।
এবং এই নৈরাজ্যের নেতৃত্বে আছেন এক তথাকথিত শান্তির দূত—ড. ইউনুস। যিনি এখন “নিরপেক্ষ সরকারের” মুখোশ পরে একটি প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।