ইউরোপীয় প্রতিনিধি। প্যারিস, ফ্রান্স; ২৩ জুলাই ২০২৫।
ঢাকার রাজপথে চলমান শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত দমন-পীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফ্রান্স-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
২২ জুলাই ২০২৫, ঢাকার সচিবালয়ের সামনে ও গুলিস্তান এলাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবিতে শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। কিন্তু সেই বিক্ষোভে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে আহত করে। ঢামেক সূত্রে জানা যায়, আহতদের মধ্যে ৭৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এছাড়া, একদিন আগে ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার পর নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় কলেজের অধ্যক্ষসহ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা মারধরের শিকার হন। এতে কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিনামা পেশ।
জেএমবিএফ-এর প্রতিক্রিয়া:
সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা ও খ্যাতনামা ফরাসি মানবাধিকার কর্মী রবার্ট সিমন বলেন,
“শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের জবাবে দমন-পীড়ন অত্যন্ত নিন্দনীয় ও মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন। এই সরকার যে আশার বার্তা নিয়ে এসেছিল, তারা আজ ছাত্রদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করছে—এটি এক গভীর ব্যর্থতা।”
জেএমবিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম বলেন,
“এই হামলা শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর নয়, গোটা জাতির বিবেকের ওপর আঘাত। আমরা স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
জেএমবিএফ-এর ছয় দফা দাবি:
১। স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপের নৈতিক ও প্রশাসনিক দায় নিয়ে তাদের অবিলম্বে সরে দাঁড়ানো উচিত।
২।আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন
জাতিসংঘ বা নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংস্থার তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
৩।অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
হামলায় জড়িত পুলিশ ও সেনা সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
৪। আহতদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ
চিকিৎসা, মানসিক পুনর্বাসন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৫। আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষা
শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৬। ভবিষ্যতে হয়রানি বন্ধে সরকারি নিশ্চয়তা
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা বা নিপীড়ন বন্ধে সরকারকে লিখিত আশ্বাস দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান:
জেএমবিএফ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর এবং দমনমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনার প্রতি সংহতি জানিয়ে জেএমবিএফ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির আওতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার চেয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।