দেশের পাহাড় ও সমতলের অধিকাংশ জনগণ এখনো অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে দিন যাপন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। তিনি বলেছেন, আজকের এ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভবিষৎ এখনো অনিশ্চয়তা ও শঙ্কায় ভরা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর চলমান সংস্কার কার্যক্রমে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কার্যকর কোনো সংগঠন বা নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
অসুস্থতার কারণে সন্তু লারমা সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আদিবাসী ফোরামের নির্বাহী সদস্য পল্লব চাকমা।
লিখিত বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশে তারা ক্রমশ ভূমিহীন ও দেশান্তরি হচ্ছেন। পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৮ বছরেও কার্যকর করছে না এ রাষ্ট্র। ফলে পাহাড়ে বিদ্যমান সমস্যার নানা রূপ প্রতিফলিত হচ্ছে।
সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুক উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, ‘ভূমি থেকে উচ্ছেদ, নারী নিপীড়ন, বৈষম্য, বিচারহীনতা—এসবের মাধ্যমে প্রান্তিক থেকে আরও প্রান্তিক হচ্ছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।’
এমন বাস্তবতায় প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার বাংলাদেশের আপামর নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক নেতাসহ সবাইকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম জোরদারে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান সন্তু লারমা।
দেশে বসবাসকারী ৪০ লাখের বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের টিকে থাকার লড়াইকে শাণিত এবং তাদের ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করতে তরুণদের অধিকতর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান সন্তু লারমা।
সন্তু লারমা বলেন, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের লড়াই ও সংগ্রাম বেগবান করা এবং গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রগতিশীল আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, এ দিবস প্রতিবছরের মতো তাদের তরুণ সমাজ ও জনগণকে নবতর সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসভাপতি অজয় এ মৃ। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য রিপন বানাই।
আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন একটি মিছিল বের করেন। সেটি টিএসসি হয়ে আবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে যায়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ আয়োজন সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।