।।আরিফ জেবতিক।।
৯০ এর গণঅভ্যুত্থানটার নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্র সমাজ। সেই গণঅভুত্থানের পরে প্রথম বাঁশটাও খেল ছাত্ররাই, দেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে গেল। ৯০ এর ডাকসু নির্বাচনের পরে দেশে পরের ডাকসু হলো ১৯/২০ সেশনে।, রাবি, চবি এগুলোতে তো আর হলোই না। কলেজগুলোর কথা বাদই দিলাম।
ক্যাম্পাসে এরকম এখানে ওখানে রাজনীতি বন্ধ করা নিয়ে হররোজ ধস্তাধস্তি না করে, সবগুলো ক্যাম্পাসে নির্বাচনের কালচার ফিরিয়ে আনুন। এতে কী লাভ হয় আজকের জেনারেশনের ছাত্রছাত্রীদের সেই অভিজ্ঞতা নেই। ছাত্র সংসদ নির্বাচন রেগুলার হতে থাকলে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের উপর নির্যাতনটা খুবই কমে যায়। সবচাইতে বড় যে মাস্তান ছাত্রনেতা, সেও আশাকরে যে কোন একটা হলের জিএস কি এজিএস হবে ( মাস্তানদেরকে ভিপি পদে সাধারনত দেয়া হয় না, ভিপি পদে গুডিগুডি শিক্ষার্থীদের চাহিদা থাকে) , সুতরাং সে প্রকৃত সাধারন ছাত্রছাত্রীদেরকে ঘাটায় না। কারন যারে গেস্টরুমে ডেকে গালাগালি করবেন কি লাথি দিবেন, সেই ছেলে, এবং তাঁকে নির্যাতিত হতে দেখলে আরো অনেক ছেলেমেয়ে কিন্তু ব্যালটে গিয়ে ‘এক দুই তিন চার, অমুক নেতার টুপকি মার’ করে দেবে।
আমার মনে হয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্রছাত্রীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস হওয়া উচিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন ফিরিয়ে আনা।
এখন ডাকসু নির্বাচন হবে কি হবে না সেটা নিয়ে হালকা সন্দেহ আছে কারন একটা বড় অংশের মানুষের ধারনা যে এখন ডাকসু দিলে শিবির জিতে যাবে, তাই ডাকসু ইলেকশন দেয়া যাবে না। এটিও একটি ফ্যাসিবাদী চিন্তা। আপনি প্রসেস দাঁড় করান, আপনার সুবিধামতো প্রসেস বানিয়েন না। শিবির বেশি ভোট পেলে জিতবে, আপনি জোর করে আটকানোর কে? বরং তখন শিবির প্রকাশ্যে আসবে আর আপনি তাদের রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে পারবেন।
ক্যাম্পাসে কে একক নিয়ন্ত্রন নিল, সেটিতে আদতে দীর্ঘদিন কোন লাভ হয় না। ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রনে ছিল ক্যাম্পাস, কী লাভ হয়েছে?
আমাদের সময় ছাত্রদল ছিল সবচাইতে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন, সম্ভবত ৯০ শতাংশ ক্যাম্পাসে একক প্যানেল দিয়ে ছাত্রদল জিতেছে, যেখানে তাঁদেরকে ঠেকাতে প্রায় জায়গাতেই ছাত্রলীগ( আওয়ামী লীগ, বাকশাল, জাসদ) ছাত্রইউনিয়ন যৌথ প্যানেল দিয়ে ছাত্রদলকে আটকাতে পারেনি।
কিন্তু সেই একছত্র আধিপত্যের ছাত্ররা কি বাকি জীবন সবাই বিএনপি করেছে, করে নাই তো। যদি করত, তাহলে বিএনপির এই দশা হয় না।
বা তারও আগে যদি যাই, একসময় ছাত্র সংগঠন বলতেই ছিল প্রবলতম জনপ্রিয় ছাত্র ইউনিয়ন। মেনন আর মতিয়া চৌধুরীর দুই ছাত্র ইউনিয়নই দেশের প্রায় সব ছাত্র সংসদ জিতে নিয়েছিল। তো, সেই বাম জনপ্রিয় ছাত্র সমাজের সবাই যদি পরবর্তী জীবনে বাম হতো, তাহলে তো এখন দেশের সব শীর্ষ পদে বামদেরকেই দেখা যেত আর অটোমেটিক বিপ্লব সম্পন্ন হয়ে যেত। কিন্তু সেটা হয়নি।
রাজনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া, এখানে প্রতিনিয়ত প্রাসঙ্গিক থাকতে হয়। আপনার আজকের কর্মকাণ্ড দেখেই মানুষ আপনার রাজনীতিকে বিচার করে বেশি। সেটাতে ভর করেন।
এত যখন গণতন্ত্রের জন্য এই জাতির আকাংখা, সেটির শুরু হোক ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে। শুধু ডাকসু নয়, যেসব ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আছে, সবগুলোতে নিয়মিত ইলেকশন লাগিয়ে দিন। প্রতিবছর ইলেকশন দিন। প্রকৃত সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা একটু খেদমত পাক।