Close Menu

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    জনপ্রিয় সংবাদ

    জননেতা সুলতান শরীফ প্রয়াণে লন্ডনে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত

    October 7, 2025

    পরিচালক পদে বিসিবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত

    October 7, 2025

    উলটো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে পৃথিবীর কেন্দ্র

    October 7, 2025
    Facebook Instagram WhatsApp TikTok
    Facebook Instagram YouTube TikTok
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Subscribe
    • হোম পেইজ
    • বিষয়
      • দেশ (Bangladesh)
      • আন্তজাতিক (International)
      • জাতীয় (National)
      • রাজনীতি (Politics)
      • অথনীতি (Economy)
      • খেলা (Sports)
      • বিনোদন (Entertainment)
      • লাইফ স্টাইল (Lifestyle)
      • শিক্ষাঙ্গন (Education)
      • টেক (Technology)
      • ধম (Religion)
      • পরবাস (Diaspora)
      • সাক্ষাৎকার (Interview)
      • শিল্প- সাহিত্য (Art & Culture)
      • সম্পাদকীয় (Editorial)
    • আমাদের সম্পর্কে
    • যোগাযোগ করুন
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Home » এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্ত সপরিবারে মৃত্যুর পথে, এসব ঘটনা কী বার্তা দিচ্ছে?
    Bangladesh

    এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্ত সপরিবারে মৃত্যুর পথে, এসব ঘটনা কী বার্তা দিচ্ছে?

    JoyBangla EditorBy JoyBangla EditorOctober 6, 2025Updated:October 6, 2025No Comments11 Mins Read
    Facebook WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook WhatsApp Copy Link

    “আগে মহাজনি ব্যবস্থায় কৃষক ঋণগ্রস্ত হত, এখন বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে,” বলেন আঁচল ফাউন্ডেশনের তানসেন রোজ।

    প্রশান্ত মিত্র

    রাজশাহীর এক নিভৃত গ্রামের বাসিন্দা মিনারুল ইসলাম কখনও কাজ করতেন দিনমজুরের, কখনও বাস চালকের সহকারী হিসেবে, আবার কখনও কৃষিজমিতে। এতসব কাজ করেও যে আয় হত, তা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকতে পারছিলেন না।

    এনজিওর ঋণের বোঝা আর অনটনের চাপে ভেঙে পড়া মিনারুল গত ১৪ অগাস্ট স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ‘হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার’ পথ বেছে নেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

    ঘটনাস্থলে পাওয়া চিরকুটে তিনি লিখে গেছেন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”

    তার একদিন আগেই গেল ১৩ অগাস্ট দেশের আরেক প্রান্ত কুমিল্লার বুড়িচংয়ে নিজ ঘর থেকে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, ‘অভাব-অনটন, ঋণের চাপ আর দীর্ঘদিনের অসুস্থতার জেরে’ মেয়েকে নিয়ে ‘বিষপানে আত্মহত্যা’ করেছেন মা।

    এ দুই ঘটনার পর মাস খানেকের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ছয় ঘটনার খোঁজ পেয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এসব ঘটনায় আর্থিক চাপ, ঋণের বোঝার পাশাপাশি সামনে এসেছে পারিবারিক কলহ।

    প্রিয়জনকে ‘হত্যার পর আত্মহননের’ একাধিক ঘটনার পর ‘সামাজিক বন্ধন’ ভেঙে পড়ার কথা যেমন সামনে আসছে, তেমনই আলোচনায় এসেছে এনজিওর ঋণে জর্জরিত হওয়ার কথা।

    মনরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এ ধরনের ঘটনাকে ‘প্যাকড সুইসাইড’ বলা হয়। কোনো ক্ষেত্রে সবাই মিলে একসঙ্গে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। আবার ‘সুইসাইড ফলোড বাই হোমিসাইড’, অর্থাৎ কেউ কেউ আছেন তারা আত্মহত্যা করেননি, তাদেরকে খুন করা হয়েছে। যেমন স্ত্রীকে বা পরিবারের অন্য সদস্যকে হত্যা করে একজন আত্মহত্যা করছেন।”

    বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম এ সালাউদ্দিন কায়সার বলছেন, পরিবারের সদস্যদের ‘হত্যার পর আত্মহননের’ বিষয়টিকে ‘এক্সটেন্ড সুইসাইড’ বলা হয়। প্রায় ৯০ শতাংশ আত্মহত্যার কারণ ‘মানসিক রোগ’।

    অধ্যাপক সালাউদ্দিনের ভাষ্য, আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে মানুষ আত্মহত্যা করলে পৃথিবীর অনেক দেশের ‘সব মানুষ’ বা বাংলাদেশেরও ‘অনেকেই’ আত্মহত্যা করে ফেলতেন। আর্থ-সামাজিক বা পারিবারিক যে কারণই থাকুক, সেটি থেকে সৃষ্ট মানসিক রোগের কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করেন।

    সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজে ‘আর্থিক, সামাজিক ও আবেগীয় বৈষম্যের’ কারণে অনেকের মধ্যেই ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ দেখতে পাওয়ার কথা বলছেন। আর অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংকটে পড়া মানুষ স্বজন, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সমর্থন না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের ‘হত্যা করে আত্মহননের’ পথ বেছে নিচ্ছেন।

    একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা

    সবশেষ খবর অনুযায়ী ২০ সেপ্টেম্বর সিলেটের গোয়াইনঘাটে স্ত্রী রুবেনা বেগমকে (৩০) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে আলী আহমদ (৩৫) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ, যিনি ‘আত্মহত্যার চেষ্টায়’ নিজেকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করছেন।

    গত ১৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে গলায় গামছা প্যাঁচানো গৃহকর্তার মরদেহ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল এবং পাশের কক্ষের খাটের উপর ছিল স্ত্রী-সন্তানের বালিশ চাপা মরদেহ।

    প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম (২৪) এবং চার বছরের ছেলে আফরানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন মো. হাবিবুল্লাহ শিপলু (৩৫)।

    স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ভাষ্য, এলাকার বউবাজারে ‘সম্মিলিত সঞ্চয় তহবিল’ নামে একটি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) ছিলেন শিপলু। কোভিড মহামারীর সময় সমিতির পরিচালক রজমান আলী গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সমিতির গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে শিপলুর ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন।

    আশুলিয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

    আশুলিয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

    এর আগের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের ধারণা, ‘পারিবারিক কলহের জেরে’ স্ত্রী-সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

    নিহতরা হলেন, বগুড়ার ধুনট উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের রুবেল আহমেদ (৩৫), তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৮) এবং তাদের ছয় বছরের কন্যা জামিলা।

    ৭ সেপ্টেম্বর সকালে বরগুনার সদর উপজেলায় ঘরের ভেতর থেকে আকলিমা নামে এক নারীর গলা কাটা এবং তার স্বামী স্বপন মোল্লার গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

    পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, স্ত্রীকে বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যার পর স্বামী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

    গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী উপজেলার একটি বাসা থেকে রেশমা আক্তার (১৮) নামে এক নারীর গলা কাটা লাশ এবং স্বামী ইব্রাহীমকে (২৯) ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করার পর পুলিশের ধারণা করেছে, ‘পারিবারিক কলহের জেরে’ স্ত্রীকে খুন করে স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

    ২০ অগাস্ট সকালে ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাবেক স্ত্রী পিংকি আক্তারকে (২৫) কুপিয়ে ‘হত্যার পর’ বিষপান করে বদর উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

    কেন এমন ‘নৃশংসতা’?

    সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে মোটাদাগে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং সেজন্য ‘চাপ প্রয়োগ’, সর্বস্ব বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া, পারিবারিক কলহ কিংবা নানান প্রেক্ষাপটে সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে ‘আবেগি হয়ে পড়ায়’ এমন ঘটনাগুলো ঘটছে বলে মনে করেন।

    তিনি বলেন, “এমন অসংখ্য পরিবার বা ব্যক্তি আছে। কিন্তু একেকজনের পরিবারে পারিবারিক, আর্থিক বা সামাজিক সংকট মোকাবিলা করার মেকানিজমগুলো একেকরকম থাকে। লড়াইটা করেও যখন কেউ চারপাশ থেকে সমর্থন পায় না, তখন নিরুপায় হয়ে এমন ঘটনা ঘটায়।”

    তার ভাষ্য, “আমাদের এখানে সবাই শুধু সফলদের গল্প শুনতে চায়। কিন্তু কীভাবে বৈধভাবে সকলকেই সফল করা যায়, সকলকেই একধরনের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ কিংবা গুণগত জীবনমান নিশ্চিত করা যায় এই উদ্যোগ বা ব্যবস্থাটা কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নেই।”

    অপরদিকে যে মানুষগুলো নিজের আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে পারে না, আবার সামাজিকভাবে একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থানে থাকা ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণির’ ক্রাইসিসটা আসলে ‘অপেক্ষাকৃত বেশি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

     এনজিওর ঋণের বোঝা আর অনটনের চাপে ভেঙে পড়া মিনারুল এক রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ‘হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার’ পথ বেছে নেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

    এনজিওর ঋণের বোঝা আর অনটনের চাপে ভেঙে পড়া মিনারুল এক রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ‘হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার’ পথ বেছে নেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

    মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ এমন ঘটনার পেছনে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণের কথা সামনে এনেছেন।

    তিনি বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দারিদ্র্য একটা বড় কারণ। আরেকটা হতে পারে পারিবারিক কলহ থেকে। একটা অভ্যন্তরীণ কলহ থেকে হঠাৎ করে রেগে যেয়ে এই সংসারে কাউকে রাখব না বলে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করতে গেল।”

    কিন্তু কখনো কখনো কারো ভেতরে যদি মানসিক রোগ থেকে থাকে পরিবারের যে সদস্যটি ঘটাল তার পূর্বাপর কোনো মানসিক রোগ ছিল কি না সেটাও ‘বিবেচ্য বিষয়’ বলে মনে করেন তিনি।

    আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা কীভাবে দেখছেন?

    আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের কাছে পরিবারের অন্য সদস্যকে হত্যা করে আত্মহত্যা বা পরিবারের সবাই মিলে আত্মহত্যা করার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি তানসেন রোজ।

    তার ভাষ্য, গত ১৫-২০ বছরে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক ‘একটা ব্যাপক পরিবর্তন’ হয়েছে, যেটার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। কারণ, আর্থিকভাবে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিসগুলো’ বেড়ে যেতে দেখা যায়।

    “আয়ের সঙ্গে সঙ্গে খরচও বেড়েছে। আগে একজন আয় করে ৮-১০ জনের একটি পরিবার চালাতেন, সেখানে এখন একাধিক ব্যক্তি আয় করেও পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আয় বাড়লেও স্বাবলম্বিতার ব্যাপারটা হয়নি, যেটি মানুষকে অসহিষ্ণু করে তুলছে।”

    তানসেন রোজ বলেন, পুঁজিবাদী মনোভাবের কারণে মানুষের চাহিদা বেড়ে গেছে, আর্থিক সমস্যা থেকে পারিবারিক কলহ তৈরি হচ্ছে।

    কৃষিনির্ভর পরিবারের ঋণগ্রস্ত হয়ে সামলে উঠতে না পারার বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, “আগে মহাজনি ব্যবস্থায় কৃষক ঋণগ্রস্ত হত, এখন বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া সামাজিকভাবে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

    “এই একাকিত্বের বোধ থেকেই তারা মনে করছে আমি থাকব না। আবার সে মারা গেলে তার পরিবার সামাজিকভাবে হেয় হবে, ঋণের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে সেজন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে।”

    সামাজিক বন্ধন কতটা দায়ী

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারের মতে, একজন ব্যক্তির আচরণ ও চিন্তাভাবনা সমাজ-সংস্কৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সভ্যতা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমাজব্যবস্থায় ‘ব্যাপক পরিবর্তন’ এসেছে।

    তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে এখন যে কেউ বহির্বিশ্বের সমাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি, কিন্তু সেই সমাজব্যবস্থার মানসিক ও সামাজিক প্রস্তুতি আমাদের নেই। এটাকে আমরা বলি কালচারাল ল্যাক। সেই সমাজব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে জাস্টিফাই করতে গিয়ে বিপত্তি বাধছে।”

    প্রত্যেক সমাজেই পৃথক কিছু মূল্যবোধ ও নিজস্বতা থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে অধ্যাপক মাহবুব বলেন, “গ্লোবালাইজেশনের কারণে আমাদের সামাজিক ভ্যালুগুলোতে প্রভাব পড়ছে। এর ফলে আমাদের সামাজিক যে বন্ধন, সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।”

    মোটাদাগে এই বিষয়গুলো ঠেকাতে সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতি জোর দেন সমাজবিজ্ঞানের এই শিক্ষক।

    মনরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা ক্রমান্বয়ে সামাজিক সংহতির জায়গা থেকে যান্ত্রিক সংহতির যুগে প্রবেশ করছি।

    “সামাজিকভাবে মানুষের ভেতরে পারস্পরিক সম্পর্কের জায়গাটা যখন বিচ্ছিন্ন হতে থাকে, তখন একটি পরিবারের ভেতর ঘটে যাওয়া তাদের চাওয়া, পাওয়া, অভাব, এই বিষয়গুলো কিন্তু পাশের মানুষ জানে না।”

    আলোচনায় ক্ষুদ্রঋণ

    বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত প্রায় ৯০০ প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর নিবন্ধিত হাজারো সমিতি এবং মাল্টিপারপাস কোম্পানি রয়েছে।

    সমসাময়িক বেশকিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, “আমরা অনেকের ক্ষেত্রে দেখি ঋণ নিয়ে হয়তো মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, ঋণ নিয়ে সে নতুন ঘর নির্মাণ করেছে। তখন সে তো আরও ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। ঋণের টাকা যদি আয় উপার্জনমূলক কাজে ব্যয় না করে তাহলে তার দুর্দশা আরো বাড়বে, আরো চাপে পড়বে।

    “এনজিওগুলোর একটা পরিকল্পনাভিত্তিক ঋণ প্রদান এবং যাকে ঋণ দেওয়া হল, তার কতটুকু উন্নতি হয়েছে, এর একটা পর্যায়ক্রমিক মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।”

    অবশ্য ক্ষুদ্রঋণের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে–এমন ‘সাধারণীকরণের’ পক্ষপাতী নন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

    তিনি বলেন, “গত ছয় মাসে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে একটি ঘটনা আমরা পেয়েছি তার ঋণ নেওয়া ছিল। কিন্তু তার সাইকোলোজিক্যাল সমস্যা ছিল বলেও জানতে পেরেছি। অনেকে অনেক কিছু বলে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এভাবে বলা যায় না।

    “প্রায় ৬ কোটি মানুষ ক্ষুদ্রঋণের আওতায় আছে, এর মধ্যে সিগনিফিক্যান্ট একটা নম্বর হয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এই ঋণে সফলতাই বেশি।” তবে এ ঋণ ব্যবস্থাপনায় ‘কিছু সমস্যা’ যে রয়েছে, তা মানছেন অধ্যাপক হেলাল।

    তিনি বলেন, “আমরা পুরো ব্যবস্থাপনাটা ডিজিটালাইজড করার চিন্তা করছি। কিন্তু ডিজিটালাইজড করলে এর মধ্যে ডিজিটাল ফ্রডও ঢুকে পড়ার একটা আশঙ্কা থাকে।”

    তার পরেও ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নজরদারির সুবিধার্থে’ ডিজিটালাইজেশন করার কথা ভাবছেন জানিয়ে অধ্যাপক হেলাল বলেন, “এটি করতে পারলে কেউ ঋণ নিতে গেলে তার অন্য কোথাও ঋণ আছে কি না জানা যাবে। সুদের হারও কমে আসবে।”

    ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির’ আওতা কতটা?

    একটি রাষ্ট্রের সাধারণ যে গুণাবলি থাকে, সেসব বিবেচনায় এতো বছরেও বাংলাদেশ একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারেনি বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সার।

    তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে কারও কম, কারও বেশি দায় থাকলেও সকলেরই ব্যর্থতা রয়েছে। রাষ্ট্রের অবশ্যই দায় আছে, তাকেই দায়িত্ব নিয়ে বৈষম্য কমাতে হবে।

    “এখন কেউ দেখছে সারাদিন খাটাখাটনি করে সংসার চালাতে পারছে না, আবার কেউ ঘরে বসেই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। এখানে বৈষম্য একটা বড় ফ্যাক্টর।”

    নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে না পারা মানুষকে ‘সামাজিক সুরক্ষায়’ অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তৌহিদুল হক।

    তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের উচিত এই শ্রেণির মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতাটা বাড়ানো।”

    তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মোশাররফ হোসেন মনে করেন, যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির ‘আলাদা কারণ’ আছে। এমন ঘটনার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘অমূলক’।

    তিনি বলেন, “এ ঘটনাগুলোকে বিভিন্ন কারণে সামাজিক অবক্ষয় বলা যায়, এগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ না। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে।”

    প্রান্তিক পর্যায়ে মানসিক সেবা সুবিধা আছে?

    সংকট থেকে সৃষ্ট ‘মানসিক সমস্যার’ কারণেই বেশিরভাগ আত্মহত্যা করেন মত দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এ রোগের চিকিৎসা পাওয়া যে কঠিন তা মানছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম এ সালাউদ্দিন কায়সার।

    তিনি বলেন, “আমাদের ১১৮টা মেডিকেল কলেজে মানসিক রোগ বিভাগ আছে। শহরভিত্তিক সেবাটা অ্যাভেইলেবল আছে। প্রাইভেট উদ্যোগে অনেক এলাকায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট সময়ে হলেও বিশেষজ্ঞরা যাচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব রয়েছে।”

    সচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া এবং স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম শুরুর তাগিদ দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “আর্থ সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন করা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে পুরো দেশ পাল্টে ফেলতে হবে।

    “কিন্তু মানুষ সচেতন হলে যার মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা যাবে, সেটা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এতে আত্মহত্যার হারও অনেক কমে আসবে।”

    প্রান্তিক পর্যায়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা পরিস্থিতি জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মালেকুল আফতাব ভূইয়ার সঙ্গে। এ বুড়িচংয়েই গত ১৩ অগাস্ট ‘অভাব-অনটন, ঋণের চাপ আর দীর্ঘদিনের অসুস্থতার জেরে’ মেয়েকে নিয়ে ‘বিষপানে আত্মহত্যা’ করেন এক মা।

    ডা. মালেকুল আফতাব ভূইয়া বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য বলে যে একটা বিষয় রয়েছে, এখন মানুষ কিছুটা হলেও তা বুঝতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আসেন আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে। তবে সংখ্যাটা যে খুব বেশি, এমনটা বলা যাবে না।”

    তিনি বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞ সেবাটা দিতে না দিতে পারলেও সাধারণ কাউন্সেলিং থেকে প্রাইমারি লেভেলের সেবাটা আমরা দিয়ে থাকি। যতটুকু আমাদের আয়ত্তের মধ্যে থাকে। এরপর প্রয়োজনে আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করে দেই।”

    তবে সপ্তাহে বা মাসে কেমন সংখ্যক মানসিক সেবা নিতে রোগী আসে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানান তিনি।

    ডা. মালেকুল ভূইয়া বলেন, “যারা আসেন তারা জেনারেল পেশেন্ট হিসেবেই লিপিবদ্ধ হয়, এ কারণে সংখ্যাটা জানা সম্ভব নয়।”

    মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সবার আরও সচেতন ‘হওয়া উচিত’ মনে করলেও উপজেলা পর্যায়ে কোনো মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নেই বলে জানান তিনি।

    এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, “আগে থেকে চিকিৎসকের কাছে না গেলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করা অনেক রোগী উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে যান। কিন্তু এ বিষয়ে সচেতন হলে চিকিৎসকের কাছে আসবে, তাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

    “আমাদের এখানে বিষ খাওয়া বা অন্য কোনোভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ রোগী যখন আসেন, তখন আমরা চিকিৎসা দেওয়ার পরে তাদেরকে কাউন্সেলিংও করি। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর জন্য মেডিকেল কলেজগুলোতে রেফার করে দেই।”

    Share. Facebook WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল কবিরসহ ৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার
    Next Article যুব মহিলালীগ নেত্রী গ্রেপ্তার, থানার ভেতর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
    JoyBangla Editor

    Related Posts

    অবৈধ ক্ষমতার খেলায় মাতৃভুমি দারিদ্র্যের দেশে পরিনত, ইউনুসের নীরবতা এবং জনগণের চিৎকার

    October 7, 2025

    সংকটে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা: জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল ১৯

    October 7, 2025

    আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল কবিরসহ ৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার

    October 6, 2025

    গণতন্ত্রের কফিনে ইউনুসের পেরেক : যখন বিরোধী দল নিষিদ্ধ, গণমাধ্যম স্তব্ধ

    October 6, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সম্পাদকের পছন্দ

    জননেতা সুলতান শরীফ প্রয়াণে লন্ডনে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত

    October 7, 2025

    নির্বাচন দিলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান ইউনূস!

    October 7, 2025

    অবৈধ ক্ষমতার খেলায় মাতৃভুমি দারিদ্র্যের দেশে পরিনত, ইউনুসের নীরবতা এবং জনগণের চিৎকার

    October 7, 2025

    সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইউরোপিয় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বৈঠক

    October 7, 2025
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • TikTok
    মিস করবেন না
    United Kingdom - যুক্তরাজ্য

    জননেতা সুলতান শরীফ প্রয়াণে লন্ডনে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত

    By JoyBangla EditorOctober 7, 20250

    গত ৬ অক্টোবর জননেতা সুলতান শরীফ প্রয়াণে লন্ডনে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ব লন্ডনের ইম্প্রেশন…

    পরিচালক পদে বিসিবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত

    October 7, 2025

    উলটো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে পৃথিবীর কেন্দ্র

    October 7, 2025

    আকাশে দুই উড়ন্ত গাড়ির সংঘর্ষ, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

    October 7, 2025

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    About Us
    About Us

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে দেশ ও বিদেশের খবর পাঠকের কাছে দুত পৌছে দিতে জয় বাংলা অঙ্গিকার বদ্ধ। তাৎক্ষণিক সংবাদ শিরোনাম ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে জয় বাংলা অনলাইন এর সঙ্গে থাকুন পতিদিন।

    Email Us: info@joybangla.co.uk

    Our Picks

    জননেতা সুলতান শরীফ প্রয়াণে লন্ডনে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত

    October 7, 2025

    নির্বাচন দিলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান ইউনূস!

    October 7, 2025

    অবৈধ ক্ষমতার খেলায় মাতৃভুমি দারিদ্র্যের দেশে পরিনত, ইউনুসের নীরবতা এবং জনগণের চিৎকার

    October 7, 2025

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.