গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পরিচিত স্পিন-সহায়ক উইকেটে গড়ালো বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভাগ্য। দীর্ঘকাল ধরে বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেস আক্রমণের প্রতিশব্দ। পেস বোলাররাই তাদের ক্রিকেটীয় অহংকার বা ‘প্রাইড’ বহন করে। কিন্তু মিরপুরের পিচের চরিত্র এতটাই একপেশে ছিল যে, উইকেটের কাছে তাদের সেই প্রাইড বিসর্জন দিতে হলো। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের পাতা স্পিন-ফাঁদে শুরুতেই আটকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের আগেই পিচ রিপোর্টে আভাস ছিল, পিচটি প্রথম ম্যাচের থেকেও শুষ্ক এবং ঘূর্ণি সহায়ক। তারই প্রতিফলন দেখা যায় দুই দলের কৌশল ও একাদশে-বাংলাদেশ অতিরিক্ত স্পিনার নাসুম আহমেদকে খেলায়, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের দুই ফ্রন্টলাইন পেসারকে বাদ দিয়ে মাঠে নামে আরও এক স্পিনার নিয়ে। এর ফলস্বরূপ, এই ম্যাচের মধ্যদিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক নতুন বিশ্বরেকর্ড জন্ম দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার পুরো ৫০ ওভারই স্পিনারদের দিয়ে বল করায়। এর মধ্যদিয়ে তারা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্পিনারদের দিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ওভার বোলিং করানোর ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার গড়া ৪৪ ওভারের দীর্ঘদিনের রেকর্ডটি ভেঙে দেয়। শেষ মুহূর্তের রিশাদ তাণ্ডব সত্ত্বেও, বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান করে। এই ঘূর্ণি-মন্থর উইকেটে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ছিল অত্যন্ত ধীরগতির এবং সতর্কতামূলক। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৪০ রান আসে। উইকেটের নিচু বাউন্স এবং তীব্র স্পিনের কারণে ব্যাটসম্যানরা স্বাভাবিক স্ট্রোক খেলতে পারছিলেন না। ওপেনার সাইফ হাসান ১৫ বল খেলার পর প্রথম রানের খাতা খোলেন এবং শেষ পর্যন্ত ৬ রানে আউট হন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে। পার্ট-টাইমার অ্যালিক অ্যাথানেজ তার ১০ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন, তার অবিশ্বাস্য ইকোনমি রেট ১.৪০ ইনিংসের মাঝখানে রানের গতিকে স্তব্ধ করে দেয়। এ ছাড়া গুডাকেশ মোটি ১০-০-৬৫-৩ আঘাত হানলেও, ক্যারিবীয় স্পিনারদের সম্মিলিত চেপে ধরা বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানরা রানের গতি বাড়াতে পারছিলেন না। উইকেট টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় সৌম্য সরকার ৮৯ বলে ৪৫ রান করে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার হন, কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ৫০-এর আশেপাশে। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ৩৯ ওভার শেষে রান ছিল মাত্র ১২৮/৫, যখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ইনিংস হয়তো ১৫০-এর নিচে শেষ হতে চলেছে। ইনিংস যখন ধীরলয়ের হতাশা নিয়ে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই মাঠে নামেন আট নম্বরে ব্যাট করতে আসা লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন। উইকেটের চরিত্র সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তিনি মাত্র ১৪ বলে ৩৯অ্যাক্টিভওয়্যার
রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। তার এই বিধ্বংসী ইনিংসে ছিল ৩টি চার এবং ৩টি বিশাল ছক্কা। মোটির পেনাল্টিমেট ওভার এবং আকেল হোসেনের শেষ ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে দ্রুত রান। রিশাদের স্ট্রাইক রেট ২৭৮.৫৭ ছিল পুরো ম্যাচের প্রেক্ষাপটে অবিশ্বাস্য এবং এটি ছিল কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের দ্বারা ওয়ানডেতে ৩০+ স্কোরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট। অন্যদিকে, বোলাররা যখন লাইন ও লেন্থ ধরে রেখে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন, তখন ৩২ রানে অপরাজিত থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে মিলে মাত্র ২৪ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন রিশাদ। এই জুটিই স্কোরবোর্ডকে টেনে নিয়ে যায় ২১৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা পর্যন্ত।