সিলেটের এমসি কলেজে মিজানুর রহমান রিয়াদ নামে এক শিক্ষার্থীর উপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে। আহত রিয়াদ এক তালামিযে ইসলামিয়ার কর্মী ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা তার উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও শিবির এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় রিয়াদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১০১ নং কক্ষের থাকেন তিনি।
রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র জুনেদ আহমদ জানান, রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পান। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে রিয়াদকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলেন।
জুনায়েদ জানান, হামলাকারীরা রিয়াদকে জিজ্ঞেস করেন- কুয়েটের ঘটনায় তুই শিবিরকে নিয়ে ফেসবুকে কী লিখেছিস। এরপর তারা রিয়াদকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। রিয়াদের রুমমেট জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। দরজা লাগিয়ে রড দিয়ে বেধড়ক পিঠানো হয় রিয়াদকে।
এসময় রুমের বাইরে থাকা জুনেদের চিৎকারের ছাত্রাবাসের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও কর্মচারী জড়ো হন। পরে শিবিরের নেতাকর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদকে রুমের বাইরে টেনে বের করে ফেলে চলে যান।
রিয়াদের সহপাঠীরা জানান- মিজানুর রহমান রিয়াদ জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি নিউজের কমেন্টে লিখেন- কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম। দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাটিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন তাহলে এই ত্যাগের মূল্য কী?
রিয়াদের এই কমেন্টর জেরে এমসি কলেজ শিবিরের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবিরের সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি শাহিন আহমদ বলেন- ঘটনাটির সঙ্গে ছাত্র শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অহেতুক দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তালামীযে ইসলামিয়া এমসি কলেজের সভাপতি মো. আলবাব হোসেন বলছেন, “কুয়েটে সংঘর্ষ নিয়ে ফেইসবুকে কমেন্ট করার জেরে বুধবার রাতে এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিজানুরের রুমে যায়। মিজানুর কেন কমেন্ট করেছে; সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়।
“পরে এটি নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্য়ায়ে রুমে আটকে রড, জিআই পাইপ ও লাটিসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মিজানুরকে মারধর করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে এমসি কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এসে তাকে বলেছে রুম থেকে চলে যেতে।”
তিনি বলেন, “রাত ১টার দিকে আমরা মিজানুরকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার পায়ে সোলাই লেগেছে। পায়ের হাড় ফেটে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”
অভিযোগের বিষয়ে এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জওহর লোকমান মুসান্না বলেন, “মারামারির সময় আমি আমার রুমে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘটনাটি জানি। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা।”
এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাইল খান বলছেন, “আমি একটু আগে আহত শিক্ষার্থীকে দেখে হাসপাতালে দেখে এসেছি। এই ঘটনায় ছাত্রশিবিরের কেউ জড়িত না। এটি তৃতীয় পক্ষের কাজ; যারা আমাদের জনপ্রিয়তা দেখে ক্ষুদ্ধ হয়ে অপপ্রচার করছে। এ ঘটনায় এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্তা নেই।’’
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এতে কোনো সংগঠনের কেউ জড়িত না। যাদের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমরা হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।”
অধ্যক্ষ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন।
শাহপরাণ থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন- আমাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচী:
এদিকে, রিয়াদের উপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড পেজে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈষম্যরিবোধীদের দাবি, এমসি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রশিবির হামলা করেছে।
রাত ৮টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বৈষম্যবিরোধীরা। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সবাইকে আহ্বান করা হয়েছে।