ফরিদ ইমন
ছাত্রলীগের সভাপতি–সেক্রেটারি যদি গাড়িতে চড়ে, হেলিকপ্টারে উঠে—দেশজুড়ে সমালোচনার সুনামি বয়ে যেত।
মিডিয়া, সুশীল, টকশো—সবাই যেন হঠাৎ নৈতিকতার ফেরিওয়ালা হয়ে যেত।
কিন্তু আজ শিবিরের সভাপতি–সেক্রেটারি পুরো বাংলাদেশ হেলিকপ্টারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে—
চারপাশে নীরবতা!
কেউ আওয়াজ তুলতে সাহস করে না।
এটাই কি সেই ন্যায়, যা নিয়ে এত বুলি কপচানো হয়?
দুইদিন আগেও যে ছেলেটা হলের ক্যান্টিনে ডাল–ভাত খেতো, আজ সে কোটি টাকার গাড়ির মালিক, গুলশানের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা!
এত বড় লাফ—
এত বিশাল পরিবর্তন—
কোথাও একটুও প্রশ্ন নেই?
কারো চোখে পড়ে না?
নাকি অন্ধ হয়ে যাওয়াই এখন “নিরপেক্ষতা”?
নিজের যোগ্যতায় ছাত্রলীগের ২–৩ জন যদি চাকরি পেত, তাতেও শুরু হয়ে যেত চরিত্রহনন।
আর আজ প্রকাশ্যেই ক্যান্ডিডেট ধরে ধরে প্রিলি–রিটেন–ভাইভা সব পাশ করানো হচ্ছে—
আজবভাবে অদ্ভুত এক চুপচাপ দেশ!
এ যেন ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা বদলে গেছে—
অথবা বদলে দেওয়া হয়েছে!
খালেদ মহিউদ্দিন কিংবা টকশোর সেই নামধারী নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা—
কখনো কি দেখেছেন ছাত্রনেতাদের আয়ের উৎস নিয়ে কঠোর কোনো প্রশ্ন তুলতে?
না!
কারণ তাদের নিরপেক্ষতা হলো বাছাই করা নিরপেক্ষতা—
যা শুধু একদিকেই চোখ খোলে,
অন্য দিকে পাথর হয়ে থাকে।
মাত্র ১৫ মাসে তারা নিজেদের লোক দিয়ে সব জায়গা ভরে ফেলেছে।
এত দ্রুত, এত নির্লজ্জভাবে!
আওয়ামী লীগ ৫০ বছর থেকেও এটা করতে পারে নাই—
না করতে চেয়েছে, না করতে পেরেছে—
কিন্তু বঞ্চিত হয়েছে কারা?
যারা মাঠে রক্ত দিয়েছে।
যারা মার খেয়েছে।
যারা রাত জেগে পোস্টার লাগিয়েছে।
যারা দল বাঁচিয়েছে।
সুশীলতার মুখোশ রক্ষা করতে গিয়ে
সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হয়েছে ছাত্রলীগের ছেলেরা।
তাদের ত্যাগ কেউ লেখে না, তাদের কষ্ট কেউ শোনে না—
আর তাদের সুযোগ কেউ নিশ্চিত করে না।
আজকের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি—
তারা ত্যাগী বলেই বঞ্চিত।
অথচ জামাত–বিএনপি যদি ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকে—
তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো, নিয়োগ, প্রভাব—এক ইঞ্চি নড়ে না।
কারণ তারা আগে দলকে শক্ত করে,
তারপর ক্ষমতার কথা ভাবে।
এই বুদ্ধিটুকু ছাত্রলীগকে কেউ শেখায়নি—
বরং বলা হয়েছে, “নিরপেক্ষতা বজায় রাখো।”
তার বিনিময়ে কী পেল?
বঞ্চনা, অপমান আর সুযোগহীনতা।
এই দেশে নিরপেক্ষতার গল্প একটাই—
যে স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায়, তাকেই নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে দুর্বল করা হয়।
অন্যদিকে যারা দেশের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে—
তাদের বিরুদ্ধে নীরবতার দেয়াল তুলে রাখা হয়।
এইচটি ইমামের বক্তব্যের পর থেকে
কতজন ছাত্রলীগ নেতা বিসিএসে ঢুকেছে?
গুনে বলার মতো কয়েকজনও কি আছে?
এটাই বাস্তবতা—
এটাই বঞ্চনার নির্মম হিসাব।
আজ পিএসসি চালাচ্ছে সেই টকশোর জাহেদরা, সেই তথাকথিত সৎ মুখোশরা।
আমরা ভুল করেছি—
আমরা ভেবেছিলাম নিরপেক্ষ লোক মানেই যোগ্য লোক।
আজ বুঝছি—
নিরপেক্ষতার কথা বলার পেছনে লুকিয়ে ছিলো ক্ষমতার হাতিয়ার।
৮ জনকে প্রিলিতে ফেল করিয়ে পরে পাশ করানো—
রিটেনে একই কাহিনি—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হাজার মানুষের মিছিল হলো?
না!
কারণ ভয় কণ্ঠ চেপে ধরেছে।
আর আজ পুলিশের লাঠি পড়লেও
টিভি চ্যানেলগুলো নীরব—
মুখে তালা মেরে বসে আছে যেন সত্য বলা এখন অপরাধ।
এই দেশের শিক্ষার্থীরা সব দেখেও চুপ থাকে—
কারণ তাদের বিশ্বাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে,
“তুমি কথা বললে তোমার ক্ষতি।”
এই ভয়ই আজ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু।
তাই আজকের সময় আপনাকে শিক্ষা দিক—
কারা আপনার পাশে থাকে,
কারা শুধু ব্যবহার করে,
কারা ন্যায়ের নামে আপনাকে বঞ্চিত করে।
শেখে নিন—
কারণ সময় এসে গেছে বুঝে নেওয়ার,
আপনি কাদের জন্য দাঁড়াবেন—
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
