জার্মান আওয়ামী লীগের আয়োজনে অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব মানবতাবিরোধী ঘটনা ঘটছে, এই অরাজকতা মানুষ আর কতদিন সহ্য করবে? এমন প্রশ্ন তুলে জননেত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের পেটে ক্ষুধা, তাদের কাজ নেই, জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই, দেশে এখন সব রকম মানবতাবিরোধী অপকর্ম চলছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এদের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে।

বক্তব্যের শুরুতেই জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পঙ্গু অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। একইসাথে, দেশের শোচনীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও চরম হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সারাদেশে মাত্রাতিরিক্ত হারে ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জঙ্গি, খুনি, গ্রেনেড হামলাকারী এমনকি হলি আর্টিজানে হামলাকারী জঙ্গি ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যাকারী সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জানমাল রক্ষা ও ভাগ্যোন্নয়নে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এই অবৈধ ইউনূস সরকারের একমাত্র লক্ষ্যই হলো অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করে রাখা। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটানা এত বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বজায় রেখেছে, যে কারণে ধীরে ধীরে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। তাঁর সময়ে, দেশে দারিদ্র্যের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি, তিনি অতিদারিদ্র্যের হারও পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। একইভাবে, বিগত বছরগুলোতে খাদ্য-পুষ্টি, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও যথেষ্ট উন্নত ছিলো, যে কারণে দেশের মানুষ অন্তত নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমাতে পারতো, নিরাপদে চলতে পারতো। তিনি অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলেন, অথচ বর্তমানে দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেখানে মানুষের জীবন থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা পুরোপুরি নির্বাসিত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, প্রায় ৩ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের এই কয়দিনেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ নামে অন্তত ১৯,৫৫৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। গণগ্রেপ্তারের নামে যথেচ্ছাচার চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছেলেকে না পেয়ে মাকে হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের মুক্তি দিয়ে জেলখানা খালি করে সেখানে এখন শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের রেখে বর্বরোচিত অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমনকি ২০ থেকে ২৫ হাজার মামলা দিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৮৩টি মামলা দেওয়া হয়েছে, যার অধিকাংশই হত্যা মামলা বলে জানান জননেত্রী।
জননেত্রী শেখ হাসিনা জানান, গত ১৫-১৬ জুলাইয়ে ৫-৬ জন নিহত হওয়ার পরপরই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন মহামান্য বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ জুলাই সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয়। পরবর্তীতে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটলে, ১ আগস্ট প্রজ্ঞাপন দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিনজন বিচারপতি দ্বারা বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে কমিটিকে হত্যাকাণ্ডের মূলে কারা তাদের চিহ্নিতকরণ, অগ্নিসংযোগসহ নানাধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম যারা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলে নিয়েই অবৈধ ইউনূস সরকার সে তদন্ত বন্ধ করে দেয়। সে কারণে একজন অপরাধীও এ পর্যন্ত ধরা পড়েনি।
দেশে বাক-স্বাধীনতার চরম অভাব দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এখন কোনো আন্দোলন হলেই তাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমনকি, শিশুকে কোলে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেওয়া মায়েরাও রেহাই পাচ্ছেন না, তাদের উপর জলকামান ছোড়া হচ্ছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এছাড়া সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে, প্রায় ৩ হাজারের উপরে পুলিশ হত্যার শিকার হয়েছেন, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ কেউই নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এমনকি সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে ঢুকে তাদেরকে গুলি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে, এরকম অরাজকতা বাংলাদেশের মানুষ এর আগে আর কোনদিন দেখেনি বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
দেশে আজ প্রতি পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, মানুষের আজ আর বিচার চাইবার কোনো জায়গা নেই। ইসকনের চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেপ্তারের পর তার পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে তার আইনজীবীদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাবা-মায়ের সামনে ছেলেকে ধরে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মায়ের কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, দেশে আজ এসব কী ধরনের বর্বরতা চলছে?
ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলা চালিয়ে সেটিতে অগ্নিসংযোগ ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানতে চান, একটি জাদুঘরের উপর মোহাম্মদ ইউনূসের এত কীসের ক্ষোভ? দেশের প্রায় এক কোটির উপরে মুক্তিযুদ্ধের নানান স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে বলেও তথ্য দেন জননেত্রী।
তিনি অভিযোগ করেন, সারাদেশে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত সন্ত্রাসীদের না ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দোষারোপ করা হচ্ছে। অথচ এই আওয়ামী লীগই ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলো, বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। আওয়ামী লীগ আমলেই মানুষ নিরাপদে ছিলো, স্বস্তিতে ছিলো, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থানের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত ছিলো।
জননেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, “তারা গণতান্ত্রিক ধারা বুঝবে কীভাবে? ইউনূস সরকারের তো কোনও ম্যান্ডেট নেই, তারা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় বসেছে সেটি আজ সারাবিশ্বের সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।” শেখ হাসিনা মনে করিয়ে দেন, মোহাম্মদ ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন যে, আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো না, তিনি ‘মেটিক্যুলাসলি ডিজাইন’ করে তার মাস্টার মাইন্ডদের দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছেন। আর এই অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জোর দিয়ে বলেন, এদের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, সারাজীবন যা কিছু করেছেন দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্যই করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশকে সবদিক থেকেই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে আক্ষেপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এভাবে কি একটা দেশ চলে নাকি? দেশটাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলাম, চরমভাবে সব ধ্বংস করে দিয়েছে।” তিনি বলেন, জনগণের রায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কোনদিন কোনও দেশের উন্নয়ন হয়নি, হবেও না।
সবশেষে, প্রবাসী দেশপ্রেমিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের, ইউনূস সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখায় অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জননেত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জার্মানির বিভিন্ন শহর থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী প্রতিবাদ সমাবেশে আংশগ্রহণ করে।
প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর হক খান ও সঞ্চালনা করেন জার্মান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া।