বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনায় উঠে এসেছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণসহ ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগসহ নানা প্রসঙ্গ।
গত এক বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। গত ডিসেম্বরে হাউজ অব কমন্সে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে লেবার পার্টির এমপি ব্যারি গার্ডিনার এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধির অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ সময় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট জানান, ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
গত ১৫ই জুলাই এমপি বব ব্ল্যাকম্যান এবং বাংলাদেশ ইউনিটি ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংসদীয় আলোচনায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংকট বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অপব্যবহার করছে। বিশেষত মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে তারা অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ওপর নজিরবিহীন আঘাত বলে আখ্যা দেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, যেখানে নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে ব্রিটিশ সরকার। পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
ব্রিটিশ এমপিরা ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনমূলক পদক্ষেপ এড়ানোর অনুরোধও করেছেন।
দুর্নীতির কথিত অভিযোগ ও টিউলিপ সিদ্দিকীর পদত্যাগ প্রসঙ্গ
বাংলাদেশকে ঘিরে আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর তার ভাগ্নি টিউলিপের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনে ইউনূস সরকার। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রভাবমুক্ত রাখতে কথিত এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে টিউলিপ মন্ত্রীত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
যদিও ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীন তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, টিউলিপের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। এরপর টিউলিপ তার আইনি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইউনূস সরকার ও দুদকের বিরুদ্ধে পাল্টা নোটিশ দিলে বাংলাদেশের আদালত টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর স্থগিতাদেশ দিতে বাধ্য হয়।
টিউলিপ সিদ্দিকীর পক্ষে তার আইনজীবীরা জানান, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন প্রচারণা ছাড়া কিছু নয়। দুদকের কাছে তথ্য-প্রমাণ ও নথিপত্র চাইলে তারা সেসব পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল কমনওয়েলথ বিষয়ক সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) একটি প্রতিবেদন প্রত্যাহার। গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি এ বছর জানুয়ারিতে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রতিবেদনটিতে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত সরকারকে কেন্দ্র করে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান তুলে ধরা হয়েছিল।