তোলপাড়, ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি
যৌথবাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুর রহমানের মৃত্যুতে কাঁদছে তার পরিবার। চার শিশু সন্তানের আহাজারিতে কাঁদছেন স্বজনরাও। বিচার দাবিতে উত্তাল কুমিল্লা। গতকাল তৌহিদের লাশ নিয়ে শহরে মানববন্ধন করেছেন স্বজন ও সাধারণ মানুষ। এ সময় তৌহিদের চার শিশু সন্তান ও স্ত্রীর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। এদিকে তৌহিদের মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে জানিয়েছে আইএসপিআর। তৌহিদ হত্যার বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
শনিবার দুপুুরে কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। নিহতের বাড়ি থেকে লাশবাহী এম্বুলেন্সযোগে মরদেহ কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়। বক্তব্য রাখেন, নিহত যুবদল নেতার স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার। তিনি বলেন, আমার স্বামী সন্ত্রাসী ছিল না। তাকে কেন এভাবে মারা হলো? আমি ৪ সন্তান নিয়ে বিধবা হলাম। আরও বক্তব্য রাখেন, তৌহিদুরের সঙ্গে আটক করা প্রতিবেশী লুৎফুর রহমান। তিনি বলেন, তাকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে সে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। মানববন্ধনে নিহতের ভাগ্নি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর মাহবুবা উদ্দিন বলেন, ঘটনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দফায় দফায় আমরা কুমিল্লা সেনানিবাসের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সেনা আইনে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা যদি ন্যায়বিচার না পাই তাহলে বিধি অনুসারে আইনগত পদক্ষেপ নেবো। মানববন্ধনে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সদস্য সচিব রাশেদুল হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা এ বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সেনাবাহিনী জুলাই আগস্ট আন্দোলনে জনতার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক রেখে দেশের জন্য কাজ করেছে। এভাবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু আমাদের কষ্ট দেয়। আশাকরি ওই ব্যক্তির পরিবার বিচার পাবে। ওদিকে যুবদল নেতা তৌহিদের জানাজায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। জানাজায় যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
যেভাবে তুলে নেয়া হয় তৌহিদকে:
যুবদল নেতা তৌহিদের ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু সাংবাদিকদের জানান, ৪ দিন আগে তার বাবা মারা গেছে। শুক্রবার ছিল কুলখানি। আমরা শোকাহত। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর ৩টি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি আমাদের বাড়ি আসে। এ সময় পোশাক ও সিভিলে থাকা কয়েকজন তৌহিদুল ইসলামের কাছে অস্ত্র আছে এমন অভিযোগে রুমে তল্লাশি করে। আমার ভাইয়ের কাছে অস্ত্র নেই আমরা বার বার তা বলার পরও তারা আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। সকাল থেকে আমরা থানায় ভাইয়ের খোঁজ নিয়েও পাইনি। তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার এস আই মোরশেদ মোবাইল ফোনে আমাদের জানায় শহরতলীর গোমতী পাড়ের গোমতী বিলাশ নামক স্থান থেকে আমার ভাইকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
এসআই মোরশেদ বলেন, গোমতী পাড়ের ঝাকুনি পাড়ার গোমতী বিলাসে গিয়ে যখন তৌহিদকে গাড়িতে উঠাই তখনো তার প্রাণ ছিল। কিন্তু কুমেক হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আমাদের নিকট হস্তান্তর করার সময় সে অসুস্থবোধ করায় হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, যুবদল নেতা তৌহিদ তাদের দলের একজন সৎ ও নিবেদিত নেতা ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার ২ মেয়ে কোরআনের হাফেজ। সে অস্ত্রধারী হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতো।