বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, যেই শব্দের সুরে এক নতুন জাতির জন্ম, আজকের বাংলাদেশে এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি। সেই ভাষণ, যার মধ্যেই ছিল বাংলার আত্মপরিচয়, স্বাধীনতার প্রেরণা ও জাতির মুক্তির চেতনা, এখন এমন এক সময়ে বাঁধা পড়েছে যেখানে “ভাষণ প্রচার করলে জেলে যেতে হবে” এমন হুমকির ছায়া যেন স্বাধীনতার সেই অমর প্রতিমূর্তিকে অস্পষ্ট করে তুলছে।
ঐতিহাসিক প্রেরণা ও সংগ্রামের সঙ্গী ভাষণ
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল শুধুই কিছু শব্দের সমষ্টি নয় এটি ছিল বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নন্দিত ও অনবদ্য প্রামাণ্যতা। ১৯৭১ সালের সেই ঐতিহাসিক দিনটি যখন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার স্বপ্নকে রূপ দিয়েছিল, তখন এটি ছিল নিরস্ত্র মানুষের মধ্যে এক জাগরণের উদ্দীপনা, এক জাতীয় স্বপ্নের সেতুবন্ধন। আজ, যখন সেই অনন্ত প্রেরণার উৎসকে নিষিদ্ধ করে সমাজের কিছু অংশই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, তখন প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করি আমরা কি সত্যিই ৫৪ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসকে সম্মান করি?
স্বাধীনতার শিহরায় দুর্নীতি ও কপটতা
যে দেশটি স্বাধীনতার চেতনায় জন্ম নিয়েছিল, সেখানে আজকের দিনে সেই মহান ভাষণের প্রচারকে নিষিদ্ধ করে, মানে হল স্বাধীনতার আদর্শের প্রতি অবিচার। রাজনৈতিক স্বার্থ, ক্ষমতার লোভ কিংবা অন্য কোনো কৌশলের নামে যদি সেই স্বাধীনতার প্রতীককে দমন করা হয়, তবে তা শুধুমাত্র ইতিহাসের বিরুদ্ধে একটি অবমাননা, নৈতিকতার বিরুদ্ধে এক বাঁধা। যারা এই নিষেধাজ্ঞা আর শাসনের জেলে নিয়ে যাচ্ছে, তারা যেন বুঝতে পারে স্বাধীনতার আদর্শ কখনোই বন্ধ হতে পারে না, তা শক্তির দ্বারে বাঁধা পড়লেও মানব ইতিহাসে এক অনন্ত বাণী হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর, সেই মহান চেতনার পালা যেন আজ বিপরীত দিকেই মোড় নিয়েছে। একদিকে রয়েছে সেই নির্ভীক, মুক্তির স্বপ্ন দেখার নেতা অপরদিকে রয়েছে এমন কিছু শক্তি, যারা অতীতের গৌরবকে আজ নিজস্ব স্বার্থে বিকৃত করে তুলতে চায়। ভাষণ প্রচার করলে যদি জেলে যাওয়ার হুমকি শোনা যায়, তাহলে সেই দেশেও স্বাধীনতার সুর যেন যেন মুখ ছাপাচ্ছে। এমন এক পরিবেশে প্রশ্ন ওঠে কি মূল্য আমাদের স্বাধীনতার আদর্শ? কিভাবে এক সময়ে বাংলার প্রাণস্পন্দন ছিল সাহস, মুক্তি ও সত্যের, আজকের দিনে সেই সুর থেকে ভিন্ন কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি?
স্বাধীনতার সংগ্রাম কখনোই শুধুমাত্র অতীতের ইতিহাসে সীমাবদ্ধ থাকবে না তা প্রতিটি প্রজন্মের নতুন চেতনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে আসতে বাধ্য। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ আমাদেরকে শেখায় সত্য, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের পথে চলতে গেলে যে কোনো বাধা, যে কোনো নিষেধাজ্ঞা আমরা ভেদ করতে পারি। আজকের নিষেধাজ্ঞা, শাসনের জেলে হুমকি, কেবলমাত্র এক মুহূর্তের জোর, যা চিরকালীন মুক্তির স্বপ্নকে কখনোই নিভিয়ে দিতে পারবে না।
এই নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়ে, আমাদের উচিত সেই স্বাধীনতার আদর্শকে স্মরণ করা ও তা পুনর্জাগরণ করা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সেই অমর বাণী থেকে অনুপ্রাণিত হয়। স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এক স্বর্ণাক্ষর তা আজও বেঁচে থাকবে, আমাদের মন ও মস্তিষ্কে চিরন্তন এক অমর প্রেরণার রূপে।