৩ নভেম্বর, শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তারা হলেন-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মুনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান। তারা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাতে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর খুনিচক্র কারান্তরালে তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। প্রতি বারের মতো এবারও যথাযথ মর্যাদায় শোকাবহ এই দিবসটি স্মরণ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী গোষ্ঠী আঁতাত করে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর একটা অশুভ নেক্সাস প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করে পাকিস্তানি ভাবধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অসাংবিধানিক সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শুধু হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে নির্বিচারে মানুষ হত্যার মহোৎসব চলছে, যা গণহত্যার শামিল। নির্বিঘ্নে মানুষের বাসা-বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই চলছে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করে সমগ্র জাতিকে একটা চরম সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল মানুষ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকলের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সারা দেশে চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা চলছে। একদিকে অপরাধী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ ও সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় বাছ-বিচার হীনভাবে গণহারে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন আটক করে রাখা হচ্ছে। বিচারের নামে চলছে চরম প্রহসন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এমনই প্রতিকূল সময় এসেছিল বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের আদর্শের প্রতি আপসহীন মানুষেরা তারপরও মাথানত করেনি। আমাদের জাতীয় ৪ নেতা এই পথের প্রদর্শক। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তাঁরা ছিলেন হিমালয়ের মতো অনঢ়। মৃত্যুভয়ও তাঁদের টলাতে পারেনি। তাই তাঁরা জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি। আজ দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে লগ্নে জাতীয় ৪ নেতা আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হিসেবে ধরা দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তাদের আপসহীন মনোভাব আমাদের জন্য চিরস্মরণীয় ও অনুকরণীয়। তাঁদের আত্মত্যাগ যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের চেতনার শিখাকে প্রজ্জ্বলিত রাখতে জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে।
আগামীকাল ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসের স্মরণে বনানী কবরস্থানে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে শাহাদতবরণকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও এম মনসুর আলীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। পাশাপাশি রাজশাহীতে এ এইচ এম কামরুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। জাতীয় ৪ নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ ও দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের স্মরণে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জাতীয় ৪ নেতার স্মরণে দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং দেশের জনগণের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
