।। আফজাল হোসেন।।
কবে দেশটাকে নিজের বলে মনে হয়েছিল? চুয়ান্ন বছরে অনেকবার মনে করার মতো সুযোগ এসেছে। অনেকবারই মনে হয়েছে, এইবার দেশ আসলেই আমাদের হলো। যতবার মনে হয়েছে, ততবারই সে অনুভবের আনন্দ টিকে থাকতে পেরেছে সামান্য কাল।
কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছে, কেনো বারবার কপালে এই দুঃখ জোটে! কেনো, কি কারণে জোটে তা নিয়ে বিস্তর ভেবেছে এদেশের বহু মানুষ বা জনগন। ভেবেছে, ভাবে- তবে ততো প্রকাশ্যে নয়, গোপনে।
কেনো গোপনে?
আশঙ্কায়। যদি প্রকাশ হয়ে পড়ে, দেশ আমার হয়নি- সে মন্তব্য অপরাধী বানিয়ে দিতে পারে। আর সে অপরাধ, দোষের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান মোটেও কম হয় না।
কালে কালে প্রশ্ন করার লোক থাকে, থাকে জামার কলার বা ঘাড় ধরে ঝাঁকি দেয়ার মানুষ। তাদের রূঢ় আচরণ- এই দ্রোহী, দেশপ্রেমহীন, অরাজক এবং অসভ্য ভাবনার সাহস কোত্থেকে পেলিরে তুই?
দেশটা আমার, আমাদের। আমরা আমাদের মতো করে দেশটাকে মনযোগ দিয়ে এবং অমনযোগী হয়ে ভালোবাসবো- তা কেনো খোলা মন নিয়ে প্রকাশ করতে দ্বিধা হবে? কেনো “দেয়ালেরও কান আছে” এমন শঙ্কায় সাধারণকে সদা সাবধানে থাকতে হয়?
যদি দেশের দূর্দিন, অব্যাবস্থা, মানুষের অযথা কষ্ট নিয়ে কারও ক্ষোভ, অভিমান, অনুযোগ থেকে থাকে- সেসকল যাতনার কথা নিজের মনে চেপে রাখতে হবে- নিজের দেশে এ ভয় ডর কাকে, কেনো করতে হয়?
নিজের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা প্রান মন খুলে বলা যাবে না। কালে কালে নয়া নয়া মালিক বনে যাওয়াদের চোখ রাঙানো, গালি খাওয়া বা গলা চেপে ধরার ভয়ে মিনমিনে জীবনযাপন করতে হবে বা হয় কেনো?
যে সব মানুষেরা অর্ধশত বছরেরও অধিক কাল ধরে নিষ্ঠার সাথে দেশটাকে ভালোবেসেছে, দেশ ও মানুষদেরকে দিয়েছে অনেক- তাঁদের অসামান্য ভালোবাসা খাঁটি কি খাঁটি নয়- সে বিচারের দায় দায়িত্ব যার ইচ্ছা কাঁধে তুলে নিতে পারে- এ কেমন স্বেচ্ছাচারিতা?
হুঙ্কারে, গর্জনে জামানা শাষন করতে চাওয়া স্বার্থবাদীরা চিরকাল সাধারণের সস্তা ঘাড় মটকাতে চেয়েছে। মটকে দিতে পেরে ভেবেছে, আহা! বেশ মালিক মালিক অনুভব হচ্ছে। দেশ তাহলে আমাদেরই। অতএব হে সাধারণ, ভালো চাও যদি মান্য করো।
অভিধানে জনগন বলে যে সম্প্রদায়ের কথা লেখা- তাদের সাথে এ ধারাবাহিক মশকরা কি জীবনভর চলতেই থাকবে?
লেখক: নাট্য অভিনেতা, লেখক।