জয় বাংলা প্রতিবেদন
বন্ধুর হত্যাকারি শাস্তিপ্রাপ্ত পলাতক মেজর ডালিমের একটি ইন্টারভিউ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আরেক সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেইন।ইউটিউবে গত ৮ জানুয়ারি থেকে এই ইন্টারভিউ শুনছেন সকলেই। যদিও অনেকে বিশ্বাস করতে পারেননি, পলাতক ডালিম জীবিত কিনা। তবে তার আত্বীয়স্বজনরা তার জীবিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে শোনা গেছে।
ইউটিউবে তা প্রকাশর পর থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেকেরই নানা কৌতুহল এই ইনটারভিউকে ঘিরে প্রকাশ পাচ্ছে। বেশিরভাগই কমেন্টকারিরা তাকে মিথ্যুক বলে বাজে মন্তব্য করছেন। এসব মন্তব্য থেকে ছাড়াও তার ইন্টারভিউয়ের নানা কথা যে ভূয়া তার নিজের লেখা বইয়ের সাথেও মিলে না।‘আমি মেজর ডালিম বলছি’ নামে তার নিজের লেখা বই বাজারে রয়েছে।
তবে সে একটি সত্য কথা বলেছে, বঙ্গবন্ধুর জ্যোষ্ঠ পুত্র শেখ কামালকে জড়িয়ে এতোদিন মিথ্যা একটি কাহিনি মিথ হয়ে প্রচলিত ছিল, ইন্টারভিউতে ডালিম বলেছে শেখ কামাল সে ঘটনায় জড়িত ছিলেন না, ছিলেন গাজী গোলাম মোস্তাফার পরিবার। কিন্তু তার বর্ণনায় আইন বর্হিভূত কথাবার্তা ও তাদের অপরিণামদর্শী জেদ তখনকার প্রকাশ পেয়েছে, যা হাস্যকর, রাষ্ট্রবিরোধীও। তার ইন্টারভিউতে পরিস্কার বলেছে, তার স্ত্রী নিম্মিকে যখন গাড়িতে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাওয়া হয়, তখন শেখ কামাল ছিলেন না,ঘটনার সাথে যে জড়িত নেই তা তার বক্তব্যে স্বীকার করেছে।প্রশ্ন আসে, এতো মিথ্যা জঘন্য তথ্য এতোদিন বিএনপি, জামায়ত ও কুচক্রীমহল প্রচার করে আসছিল কিভাবে। শেখ কামাল বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেনারেল ওসমানীর সহকারি হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমিক যোদ্ধা ছিলেন। আমরা জানি, বিএনপিতে অনেক স্বাধীনতাবিরোধীরা অনুপ্রবেশ করছে, আর জামায়াত তো পুরো সংগঠনই স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী, তারা যাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেই এজেণ্ডার অংশ হিসেবে শেখ কামালের মতো দেশপ্রেমিক ব্যাক্তিত্বকে নিয়ে কুতসিত প্রচারণায় নেমেছিল। কিন্তু দেশের মানুষ কোনোদিনই বিশ্বাস করেনি, বিভিন্ন সময় শেখ কামালের সতীর্থরা নানা অপবাদের প্রতিবাদ করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গ: এখানেই শেষ নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় সে আরো তিন বন্ধুসহ পাকস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তার কথায় উঠে এসেছে, যুদ্ধে অংশ নিয়েই বুঝতে পেরেছে এই যুদ্ধ ভারতে তার নিজের স্বার্থে পরিচালিত করছে। এ সময় মেজর জিয়াউর রহমান এবং সে মিলে গোপনে একটি গ্রুপ গঠন করেছিল মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাত করার উদ্দেশ্যে। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে তাদের এ ষড়যন্ত্র চলমান থাকে। এর অংশ হিসাবেই তারা পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এবং বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানী ভাবধারায় নিয়ে যেতে উদ্যোগ নেয়। মেজর ডালিম যে পাকস্তানী চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সেটা প্রমাণ করেছে ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। আরো বলেছে, যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায়নি, ৩ লক্ষ মারা গেছে। এতেও প্রমাণিত হয় মৃত্যুর সংখ্যা কমালে তার পাকিস্তানী প্রভুরা খুশি হবে।
ইন্টারভিউয়ের এক পর্যায়ে ডালিম বলে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রতিষ্ঠিত হলে প্রায় ৪ হাজার দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনি সদস্যকে হত্যা করেন।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ডালিম নানা মিথ্যাচার এই ইন্টারভিউতে প্রকাশ করার অর্থ কি। বাংলাদেশে বর্তমানে পাক ভাবধারার একটি মৌলবাদী চক্র ক্ষমতার বলয়ে বিদ্যমান। এই সময়ে তার ইন্টারভিউ তাতপর্যপূর্ণ। এবং যিনি ইন্টারভিউ নিয়েছেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেইন, তিনিও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ‘নূরা রাজাকারের পুত্র। এই নূরা রাজাকার ‘যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত’ হয়েছিল ১৯৭৩ গঠিত ট্রাইবুনালে, সে ছিল প্রথম দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো রাজাকার। নুরা রাজাকারের পুত্র অতি ভক্তি ভরে ডালিমকে বার বার ’স্যার’ সম্ধোধন করতে দেখা গেছে। এবং ইলিয়াস হোসেইন এও বলেছে, ৭৫ সালে ডালিম নাকি বঙ্গবন্ধুকে মেরে একটি পূণ্যের কাজ করেছে।
ইলিযাস হোসেইন ও মেজর ডালিমের রসঘন কথোপকথন প্রচারিত হলে দুজনকেই ’কুলাঙ্গার’ হিসেবে চিহ্নিত করে সচেতন মানুষরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করার পাপী এই দুই বঙ্গসন্তান। ১৯৭৫ থেকে ২০২৫ পুরো পঞ্চাশ বছর যে নাকি নামে-বেনামে বিভিন্ন দেশে পলাতক জীজনযাপন করেছে সে অপরাধী নাহলে পলাতক থাকে কেন। তার বন্ধু জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন পুরস্কার হিসেবে কিছুদিন কেনিয়ায় রাষ্ট্রদূতের মর্যাদায় থাকার সুযোগ পেয়েছিল। সে সময় চোরাচালানের সাথে যুক্ত থাকায় বহিস্কৃত হয়েছিল। সে থেকে পলাতক। সবাই মনে করেছিল, সে জীবিত নেই। হঠাত করে উদিত হয়ে নানা অপপ্রচারে যুক্ত হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সে বীর উত্তম খেতাব পেয়েছিল। হত্যাকারি হিসেবে তার এ খেতাব বাতিল হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অবদান খুইয়ে এখন পাগল হয়ে বিদেশে পাগলের অভিনয় করছে। জাতীয় বেইমানকে কেউ ক্ষমা করেনি, যে কোনো দিন তার গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলবে।