ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মাথুরাপুর আদর্শ এতিমখানায় ইফতারে বেঁচে যাওয়া দুই টুকরো কমলা খাওয়ায় মোহাম্মদ সাগর (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে আহত করেছেন সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদার।
আজ বুধবার ফজরের নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। আহত সাগর রাউতাইল গ্রামের মৃত আনসার মণ্ডলের ছেলে। সে এতিমখানার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও আবাসিকে থেকে পড়াশোনা করে।
মারধরের বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন সকাল ৮টার দিকে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার রাউতাইল এলাকার মোহাম্মদ সাগরের পিতা আনসার মণ্ডল প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। ফলে তার মা ছোটবেলা থেকে পার্শ্ববর্তী মাথুরাপুর আদর্শ এতিমখানায় আবাসিকভাবে রেখে ছেলেকে পড়াশোনা করান। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে, মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেন। শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর গত সোমবার দ্বিতীয় রমজানে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতার করে।
এরপর এতিমখানার ডাইনিংয়ে দুই টুকরো কমলা ছিল। পরে সাগর ওই কমলা খেয়ে ফেলে। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদারকে বলে। এরপর আজ সকালে ফজরের নামাজ শেষে শোবার রুমে গিয়ে দুই টুকরো কমলা চুরি করে খাওয়ার অভিযোগ এনে সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদার লাঠি দিয়ে সাগরকে বেধড়ক মারেন। কিছুক্ষণ পর সে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় এতিমখানা থেকে পালিয়ে যান শিক্ষক ইমরান হাওলাদার। পলাতক থাকায় এতিমখানায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর জানায়, ‘দ্বিতীয় রমজানে ইফতারের পর দেখি কমলার দুটি টুকরা বেঁচে আছে। তখন হেড স্যারের কাছে বিষয়টি বললে স্যার আমাকে বলেন কেউ না আসলে খেয়ে নিয়ো। পরে কেউ না আসলে রাতে আমি কমলার টুকরা খেয়ে নিই। আজ ফজরের নামাজ শেষে ইমরান স্যার আমাকে বলে তুই চুরি করে কমলা খেয়েছিস। এ কথা বলে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প ও মেহগনি গাছের লাঠি দিয়ে আমাকে মারেন।’
শিক্ষার্থীর মা মোছা. মধুমালা খাতুন বলেন, ‘সকালে জানতে পারলাম, চুরি করে কমলা খাওয়ার অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়েছেন ইমরান স্যার।’ তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে পিটিয়েছিলেন ইমরান স্যার। তখন কিছু বলিনি। আজ আবার ছেলেকে মারল। আমি তাঁর বিচার চাই।’
মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানার সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশিফা আশরাফী আইভি বলেন, সাগরের শরীরে মারধরের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। শারীরিক অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক না হলেও তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাগরকে মারধরের বিষয়ে তার মা ও এতিমখানার লোকজন থানায় এসেছিল। তিনি বলেন, সাগরের মা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।
ইফতারে বেঁচে যাওয়া কমলা খাওয়ায় মাদ্রাসাছাত্রকে হাত-পা বেঁধে পেটালেন শিক্ষক
Previous Articleবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নাম মিটিয়ে রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হল
Next Article তিন শিল্প এলাকায় সাত মাসে বন্ধ ৯৫ কারখানা